বরগুনার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘এলার্মিং’, পানি জমে থাকা বড় সমস্যা

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়েই চলেছে। তবে সম্প্রতি জরিপ ও রোগীর তথ্য অনুযায়ী বরগুনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে ‘এলার্মিং’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। তিনি বলেন, বরগুনার পরিস্থিতি এখন রাজধানীসহ অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি উদ্বেগজনক।
বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বরগুনায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, এটা আমাদের জন্য এলার্মিং। রাজধানীসহ সারাদেশের তুলনায় ওই এলাকায় এখন সংক্রমণের হার অনেক বেশি। সেখানে পানি জমে থাকা একটি বড় সমস্যা। তাই পানি কোথায় জমছে তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।”
মহাপরিচালক আরও বলেন, “ডেঙ্গু একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি চ্যালেঞ্জ, শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এককভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ডেঙ্গু মোকাবিলার দায়িত্বটা আসলে মাল্টিডিসিপ্লিনারি। এখানে স্থানীয় সরকার, সিটি করপোরেশনও আমাদের (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) অংশীদার। আমরা মূলত কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার বিষয়টা দেখি। এরবাইরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে কাজ করে বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান।”
আরও পড়ুন
সাময়িক সংকট মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বরগুনায় আমরা সাড়ে ১৩ হাজার স্যালাইন পাঠিয়েছি। হাসপাতালের খাবারদাবার নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলবো, যদি কোনো সংকট থাকে সেটি মোকাবিলা করব। এতদিন আমাদের স্যালাইনের সংকট ছিল, এই সংকট মোকাবিলায় আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”
এ সময় গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণকে সচেতনতায় মিডিয়ার বড় ভূমিকা আছে। সংবাদকর্মীরা দেশের যেকোনো সংকটে পূর্বেও অবদান রেখেছেন, আমরা আশা করছি আবারো তারা ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবেন।”
ডেঙ্গু রোগীদের জটিলতা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, “আমরা আসলে সবসময়ই জ্বর নিয়ে সচেতন থাকি না। চিকিৎসা নিতে যাই জ্বর হওয়ার পর কয়েকদিন দেখে। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীদের জন্য এটা এলার্মিং। অবহেলার কারণে যথাযথ চিকিৎসা না নেওয়ার কারণেই মূলত ডেঙ্গু রোগীদের জটিলতা বাড়ে।”
এই অনুষ্ঠানে প্রকাশিত আইইডিসিআরের জরিপে দেখা যায়— ঢাকার বহুতল ভবনের ৫৮.৮৮ শতাংশে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যেখানে গত বছর মে মাসে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ—এক বছরে বেড়েছে ১৬ শতাংশ।ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০ শতাংশের বেশি, যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ঝুঁকির সীমার ওপরে।
ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ঝিনাইদহ (৬০%), মাগুরা (৫৫.৫৬%), পিরোজপুর (২০%) ও পটুয়াখালী (১৯.২৬%)।ঝিনাইদহে ২৭০টি বাড়ি পরিদর্শনে ১৬২টি পাত্রে, মাগুরায় ১৫০টি, পিরোজপুরে ৫৪টি এবং পটুয়াখালীতে ৫২টি পজিটিভ কনটেইনার পাওয়া গেছে।
আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন অনুষ্ঠানে জানান, এসব অঞ্চলে প্লাস্টিক ড্রাম, প্লাস্টিক বাস্কেট ও দইয়ের পাত্রে এডিসের লার্ভা সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। পিরোজপুর ও মাগুরায় শতভাগ ভেক্টর হিসেবে এডিস অ্যালবোপিক্টাস শনাক্ত হয়েছে।
তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রকাশিত জরিপের ফলাফলে বরগুনায় ভয়াবহ সংক্রমণ প্রসঙ্গ না আসার কারণ জানতে চাইলে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, বরগুনায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে আমাদের আশঙ্কায় ছিল না। তবে সংক্রমণ বাড়ায় আমরা আমাদের একটি টিম পাঠিয়েছি, তারা আসলে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আলাদা রিপোর্ট প্রকাশ করব।
জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে তা খুব দ্রুত মহামারির রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ ও মাগুরার উচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের দাবি রাখে। স্থানীয় সরকার, পৌর কর্তৃপক্ষ ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়েছে।
টিআই/এআইএস