মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর পারিবারিক বাড়িতে হামলার চেষ্টা

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পৈতৃক বাড়িতে হামলার চেষ্টা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে একদল বিক্ষুব্ধ মানুষ ওই বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালায়।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং অন্যত্র বসবাস করেন এবং হামলাচেষ্টার শিকার বাড়িটি ঘটনার সময় খালি ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী ইম্ফলের উপকণ্ঠে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের খালি পৈতৃক বাড়িতে হামলার চেষ্টা করেছে একদল জনতা। উপত্যকায় নিরাপত্তা কড়াকড়ি থাকা সত্ত্বেও এই ঘটনাটি ঘটে। অবশ্য ফাঁকা গুলিবর্ষণের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনী জনতাকে হটিয়ে দেয়।
অবশ্য আগে টুইটার নামে পরিচিত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে মণিপুরের পুলিশ জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাড়িতে ‘জনতার হামলার খবর মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর’। মূলত মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং ইম্ফলের প্রাণকেন্দ্রে আলাদা ও সুরক্ষিত একটি সরকারি বাড়িতে থাকেন।
মণিপুরের একজন পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘ইম্ফলের হেইনগাং এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর পৈতৃক বাড়িতে হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনী বাড়ি থেকে প্রায় ১০০-১৫০ মিটার দূরেই হামলা চালাতে ইচ্ছুক জনতাকে থামিয়ে দেয়।’
ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, কেউ এই বাড়িতে থাকে না, যদিও এটিও সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়া হয়। তার ভাষায়, ‘দুটি দল বিভিন্ন দিক থেকে এসে মুখ্যমন্ত্রীর পৈতৃক বাড়ির কাছে চলে এসেছিল, কিন্তু তাদের থামানো সম্ভব হয়।’
আরও পড়ুন: ভারতের মণিপুরে কী ঘটছে?
এনডিটিভি বলছে, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) এবং রাজ্য প্রশাসনের পুলিশ সদস্যরা কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে এলাকার দৃশ্যমানতা হ্রাস করতে এবং বিক্ষোভকারীদের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া কঠিন করতে পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে ওই বাড়ির কাছে আরও ব্যারিকেড বসিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
অবশ্য হামলা চেষ্টার সময় বিক্ষোভকারীরা পাশের একটি সড়কেও টায়ার জ্বালিয়ে দেয়। পরে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স দেখা গেছে, যদিও কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে কুকি ও মেইতেই উপজাতির সংঘর্ষে অশান্ত অবস্থায় রয়েছে মণিপুর। টানা কয়েক মাস পরেও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যে সংঘাত থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া সম্প্রতি দুই শিক্ষার্থীর অপহরণ ও নিহতের জেরে ফের সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় রাজধানী ইম্ফলসহ কয়েকটি জেলায় কারফিউও ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: ফের উত্তেজনা, কারফিউ ঘোষণা মণিপুরে
বৃহস্পতিবার মণিপুর রাজ্য পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, রাজধানী ইম্ফলসহ কয়েকটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে গত ৫ দিন ধরে রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে ইম্ফল হাইকোর্ট মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেইদের সাংবিধানিকভাবে তফসিলি জাতি মর্যাদা দিতে কেন্দ্রীয় সরকার বরাবর সুপারিশ করে। মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মেইতেই জনগোষ্ঠীর।
হাইকোর্টের এই সুপারিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন রাজ্যের অপর জনগোষ্ঠী কুকি। মণিপুরে মোট জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ এই জাতিগোষ্ঠীর। অল্পসময়ের মধ্যেই সেই বিক্ষোভ জাতিগত দাঙ্গায় রূপ নেয়।
আরও পড়ুন: দুই দিনে মণিপুরে ঢুকল মিয়ানমারের ৭ শতাধিক নাগরিক
আর গত চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা অস্থিতিশীলতায় রাজ্যটিতে দুই জনগোষ্ঠীর অন্তত ১৮০ নিহত হয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
টিএম