বিশ্বজুড়ে টিকা বিতরণে ন্যায্যতার আহ্বান ডব্লিউএইচওর

ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষ যেন করোনা টিকা পান, সেদিকে লক্ষ্য রেখে টিকা বিতরণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।
বুধবার ডব্লিউএইচওর এই প্রধান দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর কোভিড টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সংস্থাটির গঠিত জোট কোভ্যাক্স ভ্যাকসিন ফ্যাসিলিটির টিকা বিতরণ প্রকল্পে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন।
একবছর আগে এই দিনে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণে এক ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে প্রথম জানিয়েছিল চীন। তখন অবশ্য এই ভাইরাসকে উল্লেখ করা হয়েছিল ‘অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়া’ হিসেবে।
মঙ্গলবার এক ভিডিওবার্তায় তেদ্রোস বলেন, ‘পৃথিবীর সব প্রান্তে টিকা পৌঁছানোই নতুন বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
তিনি বলেন, ‘মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বড় আশা নিয়ে এসেছে টিকা; কিন্তু সত্যিই যদি পৃথিবীকে রক্ষা করতে হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে শুধু সামর্থ্যবান দেশগুলো নয়; বিশ্বজুড়ে যেসব মানুষ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তারা সবাই যেন টিকার আওতায় আসেন।’
করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি
• গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়।
• চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি।
• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে।
• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে।
• ১১ মার্চ ‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্বের দেশ ও জাতিসমূহের পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাবই এই মহামারির কবল থেকে সভ্যতাকে মুক্ত করতে পারে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন উপায় আসলে একটিই এবং তা খুবই সরল ও সোজাসাপ্টা। সেই উপায় হলো এই সংকটময় পথের শেষ পর্যন্ত পারস্পরিক ঐক্য ধরে রাখা, পরস্পরকে সহযোগিতা করা, ন্যায্যভাবে টিকা বিতরণ এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ ও যত্নশীল হওয়া।’
দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর গঠন করা হয় কোভ্যাক্স জোট। প্রথম পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর জন্য ২০০ কোটি ডোজ টিকা পেতে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিল কোভ্যাক্স।
সম্প্রতি অবশ্য দ্বিগুণ করা হয়েছে ডোজের সংখ্যা। ২০২১ সালে জানুয়ারির প্রথমভাগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কোভ্যাক্সের তত্ত্বাবধানে এই টিকা বিতরণ করা হবে।
চীনের উহান শহর, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যেখানে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল সার্স-কোভ-২ ভাইরাস (করোনাভাইরাস)। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন একটি দলের সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে। করোনাভাইরাসের উত্থান সংক্রান্ত বিস্তারিত অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যেই উহানে গবেষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
রয়টার্সের পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজারের বেশি এবং এখন পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৭ লাখ ৮৮ হাজার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি স্বাস্থ্য সেবা বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সবাই যদি একটি কার্যকর বৈশ্বিক টিকাদান কর্মসূচি নিশ্চিত করতে পারি, সেক্ষেত্রে এই ভাইরাসটি নিছকই একটি সাধারণ স্থানীয় ভাইরাসে পরিণত হবে, অর্থাৎ তখন মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠার ক্ষমতা খুব অল্পই অবশিষ্ট থাকবে ভাইরাসটির।’
সূত্র: রয়টার্স
এসএমডব্লিউ