গাজায় যুদ্ধবিরতির বৈঠকে যোগ দিতে মিশরে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে হামাসের সঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো বিষয়ক বৈঠকে যোগ দিতে মিশরের রাজধানী কায়রোতে পৌঁছেছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাবি অ্যাশকেনাজি। রোববার এক টুইটবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি নিজেই।
টুইটে অ্যাশকেনাজি বলেন, এবারের সফরে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শৌকরির সঙ্গে গাজা ভূখণ্ডে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘হামাসের সঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে বৈঠক করব আমরা। পাশাপশি ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের মানবিক সহায়তা প্রদান ও অবকাঠামোগত পুনর্গঠনের ব্যাপারেও আলোচনা হবে।’
— - Gabi Ashkenazi (@Gabi_Ashkenazi) May 30, 2021
পাশাপাশি হামাসের হাতে যেসব ইসরায়েলি নাগরিক বন্দি আছেন, তাদের মুক্তির ব্যাপারটিও বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে আছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মিশরের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফ্রান্সের বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহও উপস্থিত থাকবেন বৈঠকে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু জানাতে চাননি তারা।
তবে তারা জানিয়েছেন, বৈঠকে আগত অতিথিদের নিরাপত্তার বিষয়টি সরকার খুব গুরুত্বসহকারে দেখছে এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল সিসি দেশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আব্বাস কামেলকে নিরাপত্তার পুরো ব্যাপারটি তদারকের দায়িত্ব দিয়েছেন।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধ বিরতিবিষয়ক বৈঠকেও উপস্থিত থাকবেন কামেল। এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনের অপর প্রধান রাজনৈতিক দল ফাতাহ্ এর সঙ্গে হামাসের যে বৈরী সম্পর্ক রয়েছে তা মিটমাট করার দায়িত্বও আব্বাস কামেলকে দিয়েছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট।
ফিলিস্তিনের দুই প্রধান ভূখণ্ড পশ্চিম তীর ও গাজা। এর মধ্যে পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণ করে ফাতাহ এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ আছে হামাসের হাতে। ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফাতাহ এর নেতা।
এতদিন এই দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রায় দা-কুমড়া সম্পর্ক ছিল। তবে গাজায় সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলার পর থেকে উভয়ের মধ্যকার সম্পর্কের তিক্ততা কিছুটা কমেছে।
গাজা ভূখণ্ড থেকে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও ইসরায়েলের বসতকারদের (সেটলার) অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধের দাবিতে গত কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন চলছিল সেখানে। এর জেরে গত ৯ মে পূর্ব জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ চত্ত্বরে প্রতিবাদকারী জনতা ও ইসরায়েলি পুলিশের মধ্যে সংঘাতের পর তা রূপ নেয় ইসরায়েল সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে হামাসের যুদ্ধে।
টানা ১১ দিন যুদ্ধ চালিয়ে যায় দুই পক্ষ – হামাস ও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় আড়াইশ’রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন, আহত হন প্রায় ১৮০০। গোলার অব্যাহত আঘাতে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় গাজা।
অন্যদিকে যুদ্ধের ১১ দিনে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর ও স্থাপনা লক্ষ্য করে ৪ হাজারেরও বেশি রকেট ছুড়েছে হামাস। মিসাইল প্রতিরোধ ব্যবস্থা আয়রন ডোম দিয়ে যদিও ৯০ শতাংশ রকেট অকার্যকর করতে পেরেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী, তারপরও দেশটিতে নিহত হয়েছেন ১২ জন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আহ্বানে এবং মিশরের তত্ত্বাবধানে যুদ্ধের একাদশ তম দিনে পরস্পরের দিকে গোলা ও রকেট ছোড়া বন্ধ করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও হামাস। ওই ভূখণ্ডে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও শান্তি স্থাপনের ব্যাপারে উভয়পক্ষের সমঝোতায় নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছে মিশর। গাজার অবকাঠামোগত পুনর্গঠনের জন্য ইতোমধ্যে ৫০ কোটি ডলার সহায়তাও দিচ্ছে দেশটি।
সূত্র: আল জাজিরা
এসএমডব্লিউ