নেতানিয়াহুর শেষ সুতায় টান: ইসরায়েলে এখন কী ঘটছে আর কী ঘটবে?

প্রায় এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর শেষ সুতায় টান পড়েছে। তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিক মধ্যপন্থী ইয়ার লাপিদ এবং কট্টর ডানপন্থী নাফতালি বেনেট জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার তাদের এই ঘোষণার ফলে দেশটিতে নেতানিয়াহু যুগের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
ইসরায়েলের ইতিহাসের দীর্ঘসময় ধরে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিনকে ক্ষমতা থেকে হটাতে বিরোধীদের জোট গঠন কেন জরুরি হয়ে পড়ল? মধ্যপন্থী ইয়ার লাপিদ এবং কট্টর ডানপন্থী নাফতালি বেনেট কীভাবে জোট গঠনের বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছালেন। তাদের এই জোট গঠনের ঘোষণায় ইসরায়েলের রাজনীতির মঞ্চে এখন কী ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
২৩ মার্চ ২০২১
মাত্র দুই বছরের মধ্যে চতুর্থবারের মতো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ইসরায়েলে। আগের সবগুলো ভোটের মতোই ২৩ মার্চের নির্বাচনেও ১২০ আসনের ইসরায়েলের পার্লামেন্টে কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী লিকুদ পার্টি এই নির্বাচনে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।
লাপিদের মধ্যপন্থী ইয়েশ আতিদ পার্টি দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। কট্টর ডানপন্থি নাফতালি বেনেটের ইয়ামিনা পার্টি মাত্র ছয়টি আসনে জয় পায়। মাত্র ছয় আসন নিয়েও ইসরায়েলের রাজনীতিতে ‘নাটের গুরু’ হিসেবে হাজির হন নাফতালি বেনেট।
৬ এপ্রিল
নতুন সরকার গঠনের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ২৮ দিনের সময় বেধে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন। উগ্র ডানপন্থী ইয়ামিনা-সহ দেশটির ছোট ছোট কট্টর ডানপন্থী এবং ধর্মীয় দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন নেতানিয়াহু।
৫ মে
ডান, মধ্য এবং বামপন্থী দলগুলোর সমন্বয়ে জোট গঠনের মাধ্যমে ‘পরিবর্তনের সরকার’ গড়ার চেষ্টা করেন ইয়ার লাপিদ। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রিভলিনও ঝুঁকে যান লাপিদের দিকে। তবে এ ধরনের জোট ভঙ্গুর হবে এবং এর ফলে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে আরব সদস্যদের সমর্থনের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু পার্লামেন্টের আরব সদস্যরা ডানপন্থী দলগুলোর বেশিরভাগ অ্যাজেন্ডার বিরোধিতা করেন।
১০ মে
ইসরায়েল এবং গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘাত-সংঘর্ষ এখানেই থেমে থাকেনি। ইসরায়েলের অনেক ইহুদি-আরব শহরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাও ছড়িয়ে পড়ে। জোট গঠনের আলোচনা ব্যর্থ হয়।
২১ মে
ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। ফের জোট গঠনের আলোচনা শুরু হয়।
৩০ মে
নেতানিয়াহুকে ক্ষমতা থেকে সরাতে মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর জোটে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন দেশটির উগ্রপন্থী জাতীয়তাবাদী নাফতালি বেনেট।
২ জুন
সংখ্যাগরিষ্ঠ জোট গঠনে প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনের বেধে দেওয়া ২৮ দিনের সময়সীমা শেষ হবে।
মধ্যপন্থী ইয়ার লাপিদ যদি ব্যর্থ হন তাহলে প্রেসিডেন্ট রিউভেন ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের যে কাউকে জোট গঠনের দায়িত্ব দিতে পারেন। এর মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও থাকতে পারেন। যদিও তিনি ইতোমধ্যে একবার প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে জোট গঠনের অনুমতি পেয়েছিলেন।
২৩ জুন
২১ দিনের মধ্যে কোনও প্রার্থী যদি বাছাই করে নেওয়া সম্ভব না হয়; অথবা মনোনীত কোনও প্রার্থী সরকার গঠন না করেন তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং পঞ্চমবারের মতো দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এটি হবে সম্ভবত আগামী শরতে।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস