হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি বাতিল করল ট্রাম্প প্রশাসন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এক বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে দেশটির হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করেছে।
যা উত্তর আমেরিকার এই দেশটির সবচেয়ে পুরোনো ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের চলমান বিরোধকে আরও উসকে দিলো। শুক্রবার (২৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক মাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের “স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম” (এসইভিপি) সনদ বাতিল করা হয়েছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি “আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে”।
তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে।”
অন্যদিকে হার্ভার্ড প্রশাসন এই পদক্ষেপকে “আইনবহির্ভূত” বলে উল্লেখ করে বলেছে, “বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা আমাদের ক্যাম্পাসকে সমৃদ্ধ করেন। তাদের উপস্থিতি শুধু হার্ভার্ড নয়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।”
এদিকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ডে ভর্তি ছিল ৬ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ছাত্রসংখ্যার ২৭ শতাংশ। এই সিদ্ধান্তে তদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে অধ্যয়নরত অস্ট্রেলিয়ার ছাত্রী সারাহ ডেভিস বিবিসিকে বলেন, “এই ঘোষণাটা এলো আমাদের স্নাতক সমাবর্তনের মাত্র পাঁচ দিন আগে। আমরা জানি না এরপর কী হবে—আমরা এখানে থেকে কাজ করতে পারব কি না, সেটাও স্পষ্ট না।”
সুইডেনের শিক্ষার্থী লিও গারডেন বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিঠি পাওয়া ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। অথচ আজ আমাদের রাজনৈতিক দৌরাত্ম্যে ‘বোঝা’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা ভীষণ অপমানজনক।”
আরও পড়ুন
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে হার্ভার্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেয়। কারণ প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি দীর্ঘ দাবির তালিকা পাঠায়, যাতে নিয়োগ, ভর্তি ও পাঠদানের ধরন বদলে ‘এন্টি-সেমিটিজম’ মোকাবিলার দাবি জানানো হয়। পরে হোয়াইট হাউস দাবি করে, এটি “ভুল করে পাঠানো হয়েছিল”।
এছাড়া হার্ভার্ডের ট্যাক্স-ছাড় সুবিধা বাতিল ও সরকারি গবেষণা অনুদান বন্ধ করারও হুমকি দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এমনকি হার্ভার্ডকে গত পাঁচ বছরের বিদেশি শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাভঙ্গ সংক্রান্ত নথি, ভিডিও, অডিও এবং ক্যাম্পাসে ‘অবৈধ’ বা ‘সহিংস’ কার্যকলাপের প্রমাণ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।
অবশ্য বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রায় দেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ না পুরো বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হচ্ছে, ততক্ষণ বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা যাবে না।
টিএম