গজনির পর হেরাতও তালেবানের নিয়ন্ত্রণে

গজনির পর আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। বৃহস্পতিবার তালেবান গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহর গজনি ও হেরাত নিজেদের দখলে নেয়। ফলে আফগানিস্তানের ১২টি প্রাদেশিক রাজধানী এখন তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে।
আফগান কর্মকর্তাদের মতে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে হেরাতের গভর্নরের অফিস ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারের দখল নেয় তালেবান।
উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের বাদগিস প্রদেশের রাজধানী কালা-ই-নাও শহর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যায়। বাদগিসের প্রাদেশিক পরিষদের একজন সদস্য সিএনএনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হামলার মুখে আফগান বাহিনী সেনাক্যাম্প থেকে পালিয়ে গেছে।
এর আগে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ আফগান শহর গজনী দখল করে নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। শহরটি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কাবুল ও কান্দাহারকে সংযুক্তকারী কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে অবস্থিত গজনী শহরটির তাৎপর্য অনেক। এই সড়কটি আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে কাবুলকে যুক্ত করেছে।
গজনির প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান নাসির আহমেদ ফাকিরি জানিয়েছেন, ‘তালেবান গজনী শহরের প্রধান প্রধান এলাকা ও স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গভর্নরের কার্যালয়, পুলিশ সদর দফতর এবং কারাগার।’
তালেবান খুব দ্রুত গতিতে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিচ্ছে। গ্রামীণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এখন বড় বড় শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো দখল করছে তালেবান। এতে করে দেশটি মারাত্মক এক নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েছে।
তালেবান বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রগতির মুখে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়ালি মোহাম্মদ আহমদজাইকে অপরসারণ করেছে আফগান সরকার।
দেশটির প্রধান শহরগুলোর ভাগ্য নিয়ে ভীষণ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। উভয়পক্ষ এসব শহরের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সরকারি সেনারা কতদিন নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবে সেটাই বড় প্রশ্ন। স্থানীয়রাও বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন।
বিবিসি বলছে, তালেবান মিলিশিয়ারা ইতোমধ্যে অর্ধেক আফগানিস্তান নিজেদের দখলে নিয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবেশী দুই দেশ পাকিস্তান ও ইরানের সঙ্গে ‘বর্ডার ক্রসিং’ রয়েছে। তবে তালেবান অবশ্য দেশের ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করছে।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আফগানিস্তানের মোট ভূখণ্ডের ৬৫ শতাংশে তালেবান তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। যে কোনো সময় আরও ১১টি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন ঘটতে পারে।
রয়টার্সের বুধবারের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করছেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলকে ৩০ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে তালেবান। আর ৯০ দিনের মধ্যে তালেবানের হাতে কাবুলের পতন ঘটতে পারে।
বিভিন্ন অঞ্চলে দুই পক্ষের এসব লড়াইয়ের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগান বিমান বাহিনী দেশটির বিভিন্ন স্থানে তালেবানের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন বলছে, নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন আফগানদেরই নিতে হবে।
নিজেদের মাতৃভূমির জন্য লড়াই করতে আফগান নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েও কোনো আক্ষেপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বাইডেন মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আরও বলেছেন, আফগানিস্তানের জনগণকেই তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রজন্মকে ২০ বছর ধরে চলা ওই যুদ্ধে ঠেলে দেবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্র : রয়টার্স, সিএনএন ও আল জাজিরা
ওএফ