তালেবানের হাতে অর্ধেক প্রাদেশিক রাজধানীর পতন

সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে আফগানিস্তানের আরও চার প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবান। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আফগানিস্তানের মোট ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ১৭টির পতন হলো তালেবানের হাতে।
আজ শুক্রবার সকালে কান্দাহার ও লস্কর গাহ দখল করার পর তালেবান এদিন বিকেলে ঘোর প্রদেশের রাজধানী ফিরুজ কোহ, উরুজগানের রাজধানী টেরেনকোট, লোগারের রাজধানী পুল-ই-আলম ও বাদঘিসের রাজধানী কালা-ই নাও দখল করে নিয়েছে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে তালেবানের অবিশ্বাস্য সামরিক সাফল্যের দিকে আফগান সরকার তো বটেই, পুরো বিশ্বই অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। কোথাও কোথাও লড়াই ছাড়াই তালেবানের কাছে পরাজয় স্বীকার বা আত্মসমর্পণ করছে সরকারি বাহিনী।
এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে ফের সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। তবে তা মূলত স্বল্প সময়ের জন্য ও সেখানে অবস্থানরত দূতাবাসকর্মী ও নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য বলে জানিয়েয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত শুক্রবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত তালেবানের দখলে যাওয়া ১৭টি প্রদেশ ও রাজধানীর তালিকা নিচে দেওয়া হলো;
| প্রদেশ | রাজধানী | |
| ১ | তাখার | তালোকান |
| ২ | কুন্দুজ | কুন্দুজ |
| ৩ | সার-ই-পাল | সার-ই-পাল |
| ৪ | সামানগান | আইবাক |
| ৫ | জাওজান | শেবেরগান |
| ৬ | বাগলান | পুল-ই-খুমরি |
| ৭ | ফারাহ | ফারাহ |
| ৮ | নিমরোজ | জারাঞ্জ |
| ৯ | বাদাখশান | ফয়জাবাদ |
| ১০ | গজনি | গজনি |
| ১১ | হেরাত | হেরাত |
| ১২ | কান্দাহার | কান্দাহার |
| ১৩ | হেলমান্দ | লস্কর গাহ |
| ১৪ | উরুজগান | টেরেনকোট |
| ১৫ | লোগার | পুল-ই-আলম |
| ১৬ | ঘোর | ফিরুজ কোহ |
| ১৭ | বাদঘিস | কালা-ই নাও |
তালেবান খুব দ্রুত গতিতে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিচ্ছে। গ্রামীণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এখন বড় বড় শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো দখল করছে তালেবান। এতে করে দেশটি মারাত্মক এক নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েছে।
দেশটির প্রধান শহরগুলোর ভাগ্য নিয়ে ভীষণ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। উভয়পক্ষ এসব শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সরকারি সেনারা কতদিন নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবে সেটাই বড় প্রশ্ন। স্থানীয়রাও বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন।
গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা দেন ৩১ আগস্টের মধ্যে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়বে। তার ঘোষণার পর থেকে তালেবান দেশটি নিজেদের দখলে নিতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই শুরু করে। এ লড়াইয়ে সফলও হচ্ছে তারা।
বিভিন্ন অঞ্চলে দুই পক্ষের এসব লড়াইয়ের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগান বিমান বাহিনী দেশটির বিভিন্ন স্থানে তালেবানের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন বলছে, নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন আফগানদেরই নিতে হবে।
নিজেদের মাতৃভূমির জন্য লড়াই করতে আফগান নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েও কোনো আক্ষেপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বাইডেন মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আরও বলেছেন, আফগানিস্তানের জনগণকেই তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রজন্মকে ২০ বছর ধরে চলা ওই যুদ্ধে ঠেলে দেবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এএস