‘মরার নয়তো মারার’ প্রতিজ্ঞা করা মার্কিন সেনা কাবুলে নিহত
কাবুল হামলায় যে ১৭০ জনের প্রাণহানি হয়েছে তার ১৩ জন মার্কিন সেনা। এর মধ্যে ১১ জন এলিট কমান্ডো বাহিনী মেরিন কোরের সদস্য। বাকি দুজন সেনা ও নৌবাহিনীর। বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরে আইএস-কে’র হামলায় নিহত হন তারা।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের শেষ পর্যায়ে এই প্রাণহানির ঘটনা ফের আলোড়ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বাইডেন প্রশাসনের আফগান নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অনেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পদত্যাগও দাবি করছেন।
তবে এখনো পেন্টাগনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাবুল বিস্ফোরণে নিহত সেনাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ইতোমধ্যে তাদের কয়েক জনের পরিচয় খুঁজে পেয়েছে। প্রকাশ্যে এনেছে নিহত সেনাদের স্বজনদের প্রতিক্রিয়াও।
কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আইএস-কে’র আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছেন রায়লি ম্যাককলাম। ২০ বছরের ওই মেরিনস কমান্ডো ওয়াইমিং প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যেই সন্তানের জন্ম দেওয়ার কথা রয়েছে তার।
রায়লি ম্যাককলামের স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের এক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘খবরটা শোনার পর ও উচ্ছ্বসিত হয়েছিল। একজন ভাল বাবাও হতে চেয়েছিল।’ রায়লি ম্যাককলামের ভাই জানিয়েছেন, ‘সবকিছু জেনে বুঝেই মেরিন কোরে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।’
হামলায় নিহত আর এক মার্কিন সেনা ম্যাক্সটন সোভিয়াক সম্ভবত কাবুলে পৌঁছেই পরিস্থিতির গুরুত্ব আঁচ করেছিলেন। সোশাল মিডিয়ায় শেষ পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘মারতে হবে অথবা মরতে হবে। অবশ্যই হত্যাকারীদের দলে থাকার চেষ্টা করব আমি’।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নাগরিক ও সেনা এবং তাদের আফগান সহযোগীদের সরিয়ে আনতে কাবুলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজে ফিরতে পারলেন না। তার মৃত্যুতে ম্যাক্সটনের পরিবারের অনেকেই বাইডেন সরকারের আফগান নীতির সমালোচনায় সরব হয়েছেন।
ম্যাক্সটনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বোন মেরিলিন লিখেছেন, ‘আমি রাজনীতির মানুষ নই। তবুও বলছি, আমার ছোট্ট ভাই খুবই বুদ্ধিমান এবং সংবেদনশীল মনের ছিল। সে নিজের ড্রামে তাল তুলতে ভালবাসতো। কিন্তু অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে তার জীবন চলে গেল।’
কাবুলে নিহত ২২ বছরের হান্টার লোপেজ রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তার বাবা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড কান্ট্রির ডেপুটি শেরিফ ছিলেন। পরিবার বলছে, হান্টারের ইচ্ছে ছিল বাবার অবসরের পরে শেরিফের ডেপুটি হবেন। কিন্তু সেই সুযোগ সে পেল না।
ক্যালিফোর্নিয়ার টেলর হভার, ডেগান ইউলিয়ামের মতো মেরিন কোরের কমান্ডোরাও রয়েছেন বৃহস্পতিবার সন্ধায় আইএস-কে হামলায় নিহতদের তালিকায়। নেটমাধ্যমে পরিবার, স্বজন ও বন্ধুরা তাদের স্মৃতিচারণা করছেন। নানাভাবে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন তারা।
এএস