আইনি সেবায় গ্লোবাল ব্র্যান্ড হতে চান একঝাঁক ব্যারিস্টার
ব্যারিস্টার আনাম হোসেন, ব্যারিস্টার আরেফিন আশরাফ খান, ব্যারিস্টার হোমাইরা ফাইজাহ মোস্তাফিজ শিফা এবং ব্যারিস্টার ফাতিমা জাহাঙ্গীর চৌধুরী। চারজনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তারা প্রত্যেকেই কাজ করেছেন দেশের সুনামধন্য আইনি পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে, সান্নিধ্য পেয়েছেন প্রখ্যাত আইনজীবীদের। সিনিয়রদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের শক্তি নিয়ে নিজেরা গড়ে তুলেছেন আইনি পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টেলার চেম্বারস। ২০১৭ সালে দুই স্বপ্নবাজ ব্যারিস্টারের শুরু করা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৫ জন তরুণ আইনজীবী কাজ করছেন।
যারা প্রত্যেকেই বিশ্বের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইনের বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রিধারী। কর্পোরেট, কোম্পানি, সিভিল, ক্রিমিনাল সব বিষয়ে উন্নত আইনি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চার ব্যারিস্টারের প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে আইনপেশায় অবদান রাখায় স্টেলার চেম্বারের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্যারিস্টার আনাম হোসেন এশিয়ার সেরা আইনজীবীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন। স্টেলার চেম্বারও ধারাবাহিকভাবে দেশের শীর্ষ স্থানীয় আইনি পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান নিয়ে তাদের স্বপ্ন আকাশছোঁয়া। বিশ্ব মানের আইনিসেবা নিশ্চিত করতে দেশের সব জায়গায় ও দেশের বাইরে স্টেলার চেম্বারের শাখা খুলতে চান। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিজেদের প্রতিষ্ঠান স্টেলার চেম্বারকে গ্লোবাল ব্র্যান্ড বানাতে চান। প্রতিষ্ঠান নিয়ে তাদের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে উদ্যোক্তা চার ব্যারিস্টার কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম।
স্টেলার চেম্বার শুরুর গল্পটা
২০১৪ সাল থেকে চেম্বারের পার্টনার ব্যারিস্টার আনাম হোসেন, ব্যারিস্টার আরেফিন আশরাফ খানের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তারপর নিজেরা কিছু করার ইচ্ছে থেকে ২০১৭ সালে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে একটা রুম নিয়ে দুজন আইনি সেবা দেওয়া শুরু করেন। তখন কোনো অ্যাসোসিয়েটস ছিল না। আলাদা কোনো ডেক্সটপও ছিল না। শুধু রুমের দরজা খোলার জন্য একজন কর্মচারী ছিল। তারপর ২০১৮ সালে ব্যারিস্টার আনাম হোসেন, ব্যারিস্টার আরেফিন আশরাফ খান, ব্যারিস্টার হোমাইরা ফাইজাহ মোস্তাফিজ শিফা এবং ব্যারিস্টার ফাতিমা জাহাঙ্গীর চৌধুরী এই চারজন পার্টনার মিলে আনুষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলেন স্টেলার চেম্বার।
স্টেলার চেম্বার প্রতিষ্ঠার আগে ব্যারিস্টার আনাম হোসেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খানের জুনিয়র হিসেবে কাজ করেছেন। ব্যারিস্টার আরেফিন আশরাফ খান প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার আখতার ইমামের জুনিয়র হিসেবে কাজ করেছেন। অন্যদিকে, ব্যারিস্টার শিফা ব্যারিস্টার ওমর খান জয়ের সঙ্গে সহযোগী আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। ব্যারিস্টার ফাতিমা জাহাঙ্গীর চৌধুরী একটি আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা, এফএম অ্যাসোসিয়েটসে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এবং তারপরে বহুজাতিক কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে অভ্যন্তরীণ আইনি পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন
শুরু থেকে স্টেলার চেম্বারে সহযোগী হিসেবে কারা ছিলেন?
ফার্মের সূচনার পরপরই ব্যারিস্টার রাকিব রায়হান রবিন একজন সহযোগী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার আইনপেশা শুরু করেন। চার বছর নিরলসভাবে কাজ করে তিনি বর্তমানে ফার্মের একজন সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করছেন। আমাদের অন্য সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ব্যারিস্টার মোহাম্মদ তাকি ইয়াসির ২০১৯ সালে যোগদান করেন। ফার্মে কাজ করার আগে তাকি ইয়াসির ব্যারিস্টার সামীর সাত্তারের সঙ্গে তার জুনিয়র হিসেবে কাজ করেছেন। যা তাকে সালিশি আইন, কর্পোরেট এবং বাণিজ্যিক বিভিন্ন আইনি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করেছে।
স্টেলার চেম্বারে কতজন কাজ করছেন, সবার যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চাই
বর্তমানে আইনি পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টেলার চেম্বারর্সে ১৫ জন উদ্যমী আইনজীবী আইনি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ১৫ জনের প্রত্যেকের বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে আইনি ডিগ্রি রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও পার্টনার ব্যারিস্টার আনাম হোসেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিখ্যাত লিঙ্কনস ইনের মাননীয় সোসাইটির ব্যারিস্টার। আরেক পার্টনার ব্যারিস্টার আরেফিন আশরাফ খান। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও লিঙ্কনস ইনের মাননীয় সোসাইটির ব্যারিস্টার।
ব্যারিস্টার হোমাইরা ফাইজাহ মোস্তাফিজ শিফা। প্রতিষ্ঠানটির পার্টনার। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও লিঙ্কনস ইনের মাননীয় সোসাইটির ব্যারিস্টার। আরেক পার্টনার ব্যারিস্টার ফাতেমা জাহাঙ্গীর চৌধুরী। তিনিও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও লিঙ্কনস ইনের মাননীয় সোসাইটির ব্যারিস্টার।
স্টেলার চেম্বারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ইয়াদনান রফিক রসি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি, এলএলএম ডিগ্রিধারী। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী।
সিনিয়র কনসালটেন্ট অ্যাডভোকেট নির্বান আহমেদ। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনি ইংল্যান্ডের নর্দাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি অনার্স, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিজিডি ডিগ্রিধারী।
চেম্বারের কনসালটেন্ট অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন। অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি করেছেন। তিনি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী।
আরও পড়ুন
সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ব্যারিস্টার মোহাম্মদ তকী ইয়াসির। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি অনার্স, সিটি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ব্যারিস্টার রাকিব রায়হান রবিন। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। এলএলবি করেছেন বিপিপি ইউনিভার্সিটি ইংল্যান্ড থেকে। বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স, কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি, এলএলএম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস।
অ্যাসোসিয়েট অ্যাডভোকেট নুসরাত জাহান। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
অ্যাসোসিয়েটস ব্যারিস্টার নিকিতা নুজহাত। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী, এলএলবি, ব্যাঙ্গর ইউনিভার্সিটি ইউকে। বাণিজ্যিক এবং কর্পোরেট আইনে এলএলএম, লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স, সিটি ইউনিভার্সিটি লন্ডন।
চেম্বারের অ্যাসোসিয়েট মো. আনোয়ারুল কবির। তিনি এলএলবি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে। সিএইচই ডিগ্রি নিয়েছেন লন্ডনের বিপিপি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
অ্যাসোসিয়েট সিফাত রাহবার খান। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রিধারী। অ্যাসোসিয়েট ফুয়াদ মাহমুদ। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রিধারী। অ্যাসোসিয়েট ব্যারিস্টার নাফিয়া হক। তিনি এলএলবি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, এলএলএম লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটি এবং বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স করেছেন সিটি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে।
কে কোন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ?
স্টেলার চেম্বার প্রতিষ্ঠার পর থেকে, বিভিন্ন আইনের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা সম্পন্ন, পারদর্শী আইনজীবীদের নিয়ে একটি টিম গঠন করাই ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্দেশ্য। টিমের যে সদস্য আইনের যে বিষয়ে পারদর্শী তিনি সেই বিষয়ে কাজ করেন। আইনি সেবা দিয়ে থাকেন। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে আইনি সেবা দেওয়া হয়। টিমের ব্যারিস্টার রবিন, অ্যাডভোকেট অনির্বাণ, অ্যাডভোকেট রসি, অ্যাডভোকেট কামাল এবং অ্যাডভোকেট কবির সাধারণত সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়, ফৌজদারি, দেওয়ানি এবং কর সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি প্র্যাকটিস করেন। আইনি সেবা দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন
অন্যদিকে ব্যারিস্টার তাকি, সিফাত, ফুয়াদ এবং অ্যাডভোকেট জাহান বেশিরভাগ সময় কোম্পানি, কর্পোরেট এবং বাণিজ্যিক, কর্মসংস্থান, রিট, অ্যাডমিরালটি, শক্তি, বৌদ্ধিক সম্পত্তি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং সালিশি বিষয়গুলো নিয়ে অনুশীলন করেন ও আইনি সেবা দেন। ব্যারিস্টার নুজহাত ও ব্যারিস্টার হক সাধারণত পারিবারিক, অভিবাসন, পরিবেশ ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি সেবা ও পরামর্শ দেন। টিমের পুরো কাজ দেখভাল ও সমন্বয় করেন ব্যারিস্টার আনাম হোসেন ও ব্যারিস্টার আরেফিন আশরাফ খান।
আপনাদের প্রতিষ্ঠান কী ধরনের সেবা প্রদান করে? খরচ কেমন?
বছরের পর বছর ধরে আইনি সেবা দিয়ে স্টেলার চেম্বার একটি পূর্ণ-পরিষেবা আইন সংস্থায় পরিণত হয়েছে। আইনের সব বিষয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফার্মটি আইনি অনুশীলনের সমস্ত ক্ষেত্রে একটি শীর্ষস্থানীয় আইন সংস্থা হিসেবে ধারাবাহিকভাবে স্থান পেয়েছে। বিগত বছরগুলোতে দুর্দান্ত পরিষেবার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে প্রশংসা পেয়েছে। পুরস্কার জিতেছে। প্রতিষ্ঠানটির আইনি সেবার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ফি নির্ধারণ করেনি।
ফি কাঠামো মূলত একটি কাজের প্রকৃতি এবং জটিলতার ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টদের বাজেট একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তবে স্টেলার চেম্বার পরিষেবাগুলোর জন্য যুক্তিসংগত ফি নিয়ে থাকে। আবার ফার্মটি অনেক ক্ষেত্রে প্রো-বোনো পরিষেবা দিয়ে আসছে। প্রো-বোনো আইনি সেবাও অব্যাহত রাখবে প্রতিষ্ঠানটি।
ভবিষ্যতে স্টেলার চেম্বার নিয়ে স্বপ্ন, পরিকল্পনা
স্টেলার চেম্বার একটি দৃঢ়-ভিত্তিক সংস্কৃতিকে লালন করে। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে আইনি সেবায় একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কাজ করছি।আমাদের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হলো সারা দেশে স্টেলার চেম্বারের শাখা স্থাপন করা এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্টেলার শাখা খুলতে চাই। আইনি সেবায় গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা আমাদের লক্ষ্য।
এমএইচডি/এসএম