ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল কোনো প্রতিযোগিতা নয়

ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল যুক্তরাষ্ট্রপন্থী অঞ্চল বা চীনপন্থী অঞ্চলের মধ্যে প্রতিযোগিতা নয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি) আয়োজনে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে অগ্রযাত্রা : উন্মুক্ত, সহিষ্ণু ও আন্তঃসংযুক্ত বঙ্গোপসাগর ও বহির্বিশ্বের উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি এমন একটি অঞ্চল তৈরির ইতিবাচক ও সম্মিলিত রূপকল্প, যার আওতায় সব দেশ তথা বাংলাদেশ, চীন, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং এ অঞ্চলের দেশেগুলো উন্নতি লাভ করতে পারবে।
পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ভিন্ন হলেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য দুদেশের রূপকল্প অভিন্ন। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন হয়, সেগুলো নিয়েই আমরা অগ্রসর হই; একসঙ্গে কাজ করতে পারি।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর প্যারিস শান্তি ফোরামে এই অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশের রূপকল্প বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটিকে অবশ্যই সবার জন্য শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ অঞ্চল হতে হবে। এই অঞ্চলের জন্য আমাদের লক্ষ্য হলো অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চল।
পিটার হাস বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সর্বান্তকরণে একমত। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বিষয়ক কৌশলপত্র ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আগামী দশকগুলোতে আমাদের প্রতিটি দেশের তথা প্রকৃতপক্ষে সারাবিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ওপর।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এ অঞ্চলের জনগণ ও সরকার তাদের সকল নাগরিকের সমৃদ্ধির জন্য জন্য আরও বেশি সুযোগ চায়। তারা তাদের দেশের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ও বিশ্বব্যাপী আরও সংযোগ গড়ে তোলার সুযোগ চায়। তারা শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রত্যাশী। সমগ্র ইন্দো-প্যাসিফিকের জনগণও চায় গণতন্ত্র এবং তাদের মানবাধিকারকে সম্মান করা হোক।
যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গঠনের বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে চায় জানিয়ে পিটার হাস বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিকের মাধ্যমে এ অঞ্চল স্বচ্ছভাবে সমস্যার সমাধান করা হবে। নিয়মনীতি প্রণীত এবং প্রয়োগ করা হবে ন্যায়সঙ্গতভাবে। প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব পথ ও তাদের নিজস্ব অংশীদার বেছে নিতে সক্ষম হবে। যেখানে প্রতিটি দেশের জনগণকে স্বাধীনভাবে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে দেওয়া হবে।
বক্তব্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার নৃশংস ও বিনা প্ররোচনায় আগ্রাসন বিশ্বের জন্য একটি সতর্কবাণী। আমাদের নীতি-আদর্শগুলো অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। একটি বিষয় আমি সুস্পষ্ট করতে চাই, এই নীতি-আদর্শগুলো সুরক্ষার লক্ষ্য কোন দেশকে দাবিয়ে রাখা নয়। বরং সব দেশের জন্য তাদের নিজ নিজ পথ বেছে নেওয়ার অধিকার সুরক্ষা করা, যা হবে জবরদস্তি ও ভয়ভীতিমুক্ত।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের আয়োজনে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক বিশেষ দূত গ্র্যাব্রিয়েল ভিসেন্টিন।
এনআই/এসকেডি