কখনো পুলিশ, কখনো সচিব তিনি

মোজাম্মেল হক, বয়স ৪৩। বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যায় হলেও থাকেন নগরীর সদরঘাট থানার কামাল গেইট এলাকায়। পরিচয়ে কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, কখনো পুলিশ, আবার কখনো সাংবাদিক। এসব পরিচয় ব্যবহার করেই দীর্ঘদিন ধরে করে যাচ্ছেন নানান প্রতারণা। সরকারি স্কুলে ভর্তি, নৌ-বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রতারক মোজাম্মেল হককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এসব কথা জানায়। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানিয়েছে, মর্জিনা আক্তার নামে এক নারীর করা প্রতারণা মামলায় রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মর্জিনার অভিযোগ, তার স্বামী গত ৮ মাস আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিছুদিন আগে তার স্বামীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে আসামি মোজাম্মেল ফোন করে নিজেকে তার স্বামীর পরিচিত ও ২৫তম বিসিএস ক্যাডার (পুলিশ) বলে জানায়। কথাবার্তার একপর্যায়ে মর্জিনা বলেন, বড় ছেলে শাহরিয়ার ফারুক আবিরকে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়েছে। কিন্তু লটারিতে না আসেনি।
পরে মোজাম্মেলের সঙ্গে ২/৩ দিন কথা বলার পর ছেলেকে মুসলিম স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যাবে কি-না জানতে চাইলে, মোজাম্মেল করা যাবে বলে জানান। তবে কিছু টাকা লাগবে বলেও জানায়। ছেলেকে মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি করার জন্য টাকা নিয়ে দর কষাকষি করেন।
এ সময় মোজাম্মেল ওই নারীর কাছে থেকে ১৬ হাজার টাকা নিয়ে গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের ভুয়া স্বাক্ষর সম্বলিত কাগজ দিয়ে মুসলিম হাই স্কুলে যেতে বলেন।
ওই নারী কাগজটি নিয়ে স্কুলে দেখা করলে কর্তৃপক্ষ সেটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। ২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেলে প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি টের পান। এ সময় মোজাম্মেলকে টেলিফোনে না পেয়ে থানায় মামলা করেন মর্জিনা। এ মামলার সূত্র ধরেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
ওসি নেজাম বলেন, মোজাম্মেল সচিবের ভিজিটিং কার্ডে পদবী ঠিক রেখে নিজের মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল আইডি প্রতিস্থাপন করে নিজেকে উপ-সচিব হিসেবে পরিচয় দিত। পরে ওই ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলেন।
এছাড়াও নৌ-বাহিনীর কমান্ডার পরিচয় দিয়ে বাহিনীটিতে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করে মোজাম্মেল। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মালামাল কেনার পর টাকা পরিশোধ না করারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। মোজাম্মেল নিজেকে ২৫তম বিসিএস পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ জানিয়েছে, মোজাম্মেল নিজেকে অনলাইন টিভি চ্যানেল এস এর প্রধান প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়েও প্রতারণা করেন। টিভি চ্যানেলটির নামে অফিস ভাড়া নিয়ে দুই বছরের বেশি ভাড়া আটকে রেখে মালিককে হুমকি দিতেন তিনি।
এমএইচএস