২৫টি সংস্থার হালনাগাদ লাইসেন্স ও ছাড়পত্র রয়েছে

ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি ২৫টি সংস্থার সবকটির হালনাগাদ লাইসেন্স ও ছাড়পত্র রয়েছে বলে দাবি করেছে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বিকেলে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের মতবিনিময়ের সময় এ তথ্য উপস্থাপন করেন বিএম ডিপোর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরইমধ্যে শতাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিপো কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার গঠিত তদন্ত কমিটি ২৫৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে মালিকপক্ষসহ তদারকি সংস্থাগুলোর গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে কমিটি। বুধবার (৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এ বিষয়ে মিজানুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে কমিটি ফায়ার সার্ভিস, ডিপো কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, যেসব কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, সেগুলো রপ্তানির জন্য সিলড করা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বোঝাই ছিল।
আরও পড়ুন>> সরকারি চাকরি চান নিহত ফায়ার সার্ভিস সদস্য মনিরুজ্জামানের স্ত্রী
এদিন লিখিত বক্তব্যে স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, ২০১০ সালে দেশি বিদেশি প্রায় ৫শ কোটি টাকা বিনিয়োগে সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে বিএম কনটেইনার ডিপোটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নীতিমালা এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আইসিডি/অফডক নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি ২৫টি সংস্থার প্রত্যেকটির প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও ছাড়পত্র নিয়েই কমপ্লায়েন্স মেনে ডিপোর অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিএম ডিপো। বর্তমানে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের এসব লাইসেন্স ও ছাড়পত্র হালনাগাদ রয়েছে।
তিনি বলেন, বিপদজ্ঞানক পণ্য (ডিজি গুডস) ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস (আইএমডিজি) কোড মেনে ডিপোর অপারেশনাল কার্যক্রম করে বিএম ডিপো। সব ধরনের লাইসেন্স এবং ছাড়পত্রের কপি এরইমধ্যে সরকারি প্রত্যেকটি তদন্ত কমিটিকে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় বলা হয়, দুর্ঘটনার এক মাস পরে সব মহলের সহযোগিতায় সাময়িকভাবে ডিপোটি চালু করা হয়েছে। এরইমধ্যে ডিপোতে অক্ষত থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান আমদানি-রপ্তানি পণ্য খালাসের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিপোতে অক্ষত থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা পণ্য খালাস করে রপ্তানিখাতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ত্বরান্বিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, দুর্ঘটনার পর প্রতিশ্রুত অর্থসহায়তা দেওয়া শুরু করেছে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে সবমিলিয়ে নিহত ২৬ জন ও আহত ৪৩ জনের পরিবারকে মোট ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা, অঙ্গ হারানো আহতদের ৬ লাখ টাকা এবং সাধারণ আহতদের ৪ লাখ টাকা, ফায়ার সার্ভিসের নিহত সদস্যদের প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা, অঙ্গ হারানো আহতদের ১০ লাখ টাকা এবং সাধারণ আহতদের ৭ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত হয়নি এবং যেগুলোতে আইনি জটিলতা রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী ধাপে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

পাশাপাশি নিহত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারে কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি থাকলেও তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা, যাদের পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নেই এবং নিহতদের ছোট সন্তান রয়েছে, তারা উপার্জনক্ষম না হওয়া পর্যন্ত নিহত কর্মীদের মাসিক বেতন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে অনেকে চাকরির জন্য সিভি জমা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুর্ঘটনার পর এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬শ কর্মকর্তা কর্মচারীকে মে ও জুন মাসের বেতন এবং কোরবানির ঈদের বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। নিহত-আহত প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাড়িতে, বাসায় বাসায় গিয়ে বেতন-ভাতা ও বোনাসের এসব টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সভায় বলা হয়, বন্দর ও বিভাগীয় কমিশনারের তদন্ত প্রতিবেদন এখনও হাতে পাইনি। হাতে পেলে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব।
বিভাগীয় কমিশনার তদন্ত রিপোর্টে আপনাদের গাফলতির অভিযোগ আনা হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, পুরো রিপোর্ট না দেখে মন্তব্য করা যাবে না।
মতবিনিময় সভায় বিএম ডিপোর পরিচালক শফিকুল ইসলাম, বিএম ডিপোর মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন (অব.) মাইনুল আহসান খানসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কেএম/জেডএস