সহজে টাকা উপার্জনের জন্য পীর হোন ইকবাল

কুমিল্লার দেবীদ্বারে লিচুর প্রলোভন দেখিয়ে ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় ভণ্ডপীর মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর মো. ইকবাল হোসাইন র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। রোববার (১৮ জুন) রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব জানায়, সহজে টাকা উপার্জনের জন্য পীর হোন ইকবাল।
গত ২ জুন কুমিল্লার দেবীদ্বারে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে দেবীদ্বার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এই মামলায় ভণ্ড পীর ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন>>কুমিল্লার দেবিদ্বারের সেই ‘ভণ্ডপীর’ ইকবাল ঢাকায় গ্রেপ্তার
ইকবালের আস্তানায় আসা লোকজন মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ করতেন। এছাড়াও সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের এবং তার আস্তানার বিভিন্ন আইডি ও পেইজ খুলে আস্তানার প্রচার-প্রচারণা করে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। ইতোপূর্বে ইকবাল বেশ কয়েকবার অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হলে স্থানীয় লোকদের কাছে ধরা পরে। পরে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিকট অঙ্গীকারনামা দিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পায়। তার অন্ধ ভক্তরা তাকে হাদিয়া স্বরূপ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ অলংকার ও গবাদি পশু ইত্যাদি প্রদান করতেন যা সে নিজের ও নিজের আস্তানার জন্য ব্যয় করতেন।

সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২ জুন দুপুর আনুমানিক ১২টায় বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গেলে ইকবাল ভিকটিমকে লিচু দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার আস্তানায় ডেকে নিয়ে কৌশলে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ভিকটিম সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে আসলে তার মা তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ইকবাল ও তার অনুসারীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভিকটিমের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়। ইকবাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে তার আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
তিনি বলেন, ইকবাল কুমিল্লার একটি স্থানীয় কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে বিভিন্ন কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করতেন এবং স্থানীয় লোকজন তাকে প্রফেসর বলে ডাকতেন। একপর্যায়ে সে স্থায়ী কোনো চাকরি না পেয়ে সহজে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে কথিত পীর হিসেবে দাবি করেন।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, পরে ইকবাল তার বেশভূষা ও চলাফেরায় পরিবর্তন এনে পীরের লেবাস ধারণ করেন। এবং তার নামের শেষে শাহ সুন্নি আল কাদেরী উপাধি যুক্ত করে ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে লোকদের অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। ঘটনার পর থেকে এলাকা থেকে পালিয়ে প্রথমে কক্সবাজার ও পরে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপন করেন। সর্বশেষ সে তার স্থান পরিবর্তন করে রাজধানীর মিরপুরে তার এক পরিচিতের বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ইকবাল কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার তথাকথিত একজন পীরের মুরিদ এবং স্বনামধন্য একটি দরবার শরীফের অনুসারী ও প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে দাবি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে তার বাড়িতে একটি আস্তানা গড়ে তোলেন। তার ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতেন না। বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়ে ও মোবাইলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল শুনে কিছু ধর্মীয় বিষয় মুখস্ত করে সপ্তাহে একদিন তার আস্তানায় জমজমাট আসর বসিয়ে বক্তব্য দিতেন। নিজ আস্তানার বাইরেও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দিতেন। তার আস্তানায় আসা লোকজন মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম চালাতেন।
এমএসি/এমএ