করোনার কড়াকড়িতেও টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা আসছে ঢাকায়

মো. সুজন (৩০) ও মো. মোশারফ হোসেন (৪০) সম্পর্কে ভাই। দীর্ঘ সময় ধরে নিজেরা ইয়াবা আনা-নেওয়া করতেন। গত ১০ বছরে ইয়াবা কারবারের দক্ষতা পুঁজি করে নিজেরাই নেমে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়। নিজস্ব ট্রাকে পণ্যের আড়ালে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় বিক্রি করে আসছিলেন তারা। তবে দক্ষ ইয়াবা কারবারি দুই ভাই শেষ অবধি ধরা পড়েছে।
৪৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগ। এসময় চক্রের আরও দুজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- ট্রাকের হেলপার মো. আশরাফ আলী (২৬) এবং চালক জহিরুল ইসলাম (৩১)।
রোববার (১৮ এপ্রিল) সকালে খিলগাঁও থানাধীন মেরাদিয়াহাট সংলগ্ন এইচ ব্লকের ৫ নং বাড়ির সামনে থেকে তাদের ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম। এসময় মাদক বহনে ব্যবহৃত তাদের নিজস্ব ট্রাকটিও জব্দ করা হয়।
সহকারী পুলিশ কমিশনার মধুসূদন মন্ডল জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা লালবাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম মেরাদিয়া হাট সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করে। সকালে সন্দিগ্ধ ট্রাকটি পৌঁছার পরই পথরোধ করে চারজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি সুজন ট্রাকের কেবিনের ভেতর চালকের আসনের উপর সিলিংয়ের সঙ্গে বিশেষ কায়দায় তৈরি বক্স থেকে সাদা রংয়ের কসটেপ ও সাদা রঙয়ের টিস্যু পেপার দিয়ে মোড়ানো ২২টি বান্ডেল বের করে। কসটেপ ও টিস্যু পেপার ছিঁড়ে প্রতিটি বান্ডেলে ১০টি করে মোট ২২০টি জিপার পলিব্যাগ থেকে ৪৪ হাজার পিস হালকা গোলাপি রঙয়ের ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, সুজন ও মোশারফ হোসেন সম্পর্কে ভাই। গত ১০ বছর ধরে তারা ইয়াবা কারবারে জড়িত। নিজেদের দক্ষতা ও কৌশল কাজে লাগিয়ে নিজস্ব ট্রাকে পণ্য পরিবহনের আড়ালে নেমে পড়েন ইয়াবা কারবারে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার সুজনের দেওয়া তথ্যের বরাতে মধুসূদন মন্ডল জানান, ‘লকডাউনে’ সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী ট্রাক চলছে। এই সুযোগে তারা ট্রাকটি পণ্যবোঝাই করে পাঠায় কক্সবাজারে। সেখান থেকে খালিই ফিরছিল ট্রাকটি। যে কারণে পথে হয়ত কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে পড়েনি। তবে তারা কক্সবাজার সীমান্ত থেকে ওই ৪৪ হাজার পিসের ইয়াবার চালানটি নিয়ে আসে।
তারা পরস্পর যোগসাজশে জব্দ ট্রাকের কেবিনের ভেতরে সিলিংয়ের সঙ্গে বিশেষভাবে বক্স তৈরি করেছে। যা বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায়ই নেই। এভাবেই কৌশলে কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন ধরে এনে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছিল তারা।
তাদের সহযোগী পলাতক আসামি কক্সবাজারের টেকনাফের মো. সেলিম (২৮) জব্দ করা ইয়াবা সংগ্রহ করে। ট্রাকযোগে বহন করে এনে অপর সহযোগী ভোলার মো. লিয়াকতের (৩৫) কাছে বিক্রির জন্য ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল। পুলিশের অভিযানে দুজনই পালিয়ে যায়। এই চক্রকে অবৈধ ইয়াবা বহন কাজে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ড্রাইভার হিসেবে জহিরুল ইসলাম এবং হেলপার হিসেবে আশরাফ আলী দীর্ঘদিন ধরে সহায়তা করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় মাদক আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জেইউ/এসএসএইচ