শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ফেরতের দাবি

ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষার দাবিতে সংহতি সমাবেশ শেষে মেয়র বরাবর উদ্যান বিষয়ক প্রস্তাবনা দিয়েছে ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলন নামের একটি সংগঠন।
মঙ্গলবার ( ১১ জুন) রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ভবনের সামনে ‘ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলন’ ব্যানারে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে তারা মেয়র বরাবর উদ্যান বিষয়ক প্রস্তাবনা প্রদান করেন।
‘ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলন’ এর পক্ষ থেকে গত ১৮ মে শহীদ আনোয়ারা উদ্যান থেকে মেট্রোরেলের নির্মাণ সামগ্রী অপসারণ করে উদ্যানটি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষকে ৩০ দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজিত ওই সমাবেশে সব শ্রেণিপেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সমাবেশে বক্তারা দেশ জুড়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। একইসঙ্গে তারা ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত ফার্মগেটের ঐতিহাসিক শহীদ আনোয়ারা উদ্যানসহ ঢাকার অন্যান্য উদ্যান দখলমুক্ত করে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, ফার্মগেটে শহীদ আনোয়ারা উদ্যানের এই জায়গাটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের। এটির রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের দায়িত্ব ছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের। পরবর্তীতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে জায়গাটি মেট্রোরেলের প্রকল্প অফিস ও নির্মাণ উপকরণ রাখার কাজে ব্যবহার করে আসছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শেষে এ উদ্যান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এখন বাণিজ্যিক প্লাজা তৈরি করে জায়গাটি নিজেদের করে নিতে চাইছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত অক্টোবরে ফার্মগেটের ফুট ওভারব্রিজ উদ্বোধনের সময় শহীদ আনোয়ারা উদ্যান উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি প্রদান করলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
বক্তারা আরও বলেন, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও দেশের সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান, জলাধারের জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন, অন্য কোনোভাবে ব্যবহার বা ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। ঢাকা বিশদ উন্নয়ন পরিকল্পনা (ড্যাপ) ২০২২-৩৫ অনুযায়ী ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ঢাকা উপ-অঞ্চল ২৬ এর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে এটিকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব আইনি দলিলের নিরিখে এটি স্পষ্ট যে আনোয়ারা উদ্যানে মেট্রোরেলের নির্মাণ সামগ্রী রাখতে অনুমতি দেওয়া বা মেট্রোরেলের অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার কোনো বৈধতা নেই।
সমাবেশ থেকে ডিএনসিসি মেয়রকে ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান থেকে কবে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ তাদের অস্থায়ী স্থাপনা ও সরঞ্জাম সরিয়ে নেবে সে বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ, ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ মেট্রো স্টেশন রাস্তা ও পিলার নির্মাণের জন্য উদ্যানের মূল জমিনের কতটুকু ব্যবহার করেছে এবং অবশিষ্ট জমির পরিমাপ ও উদ্যান পুনর্গঠনের কাজ কবে থেকে শুরু হবে তার রূপরেখা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করার দাবি জানান ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব।
সমাবেশ শেষে মেয়রের কাছে দাবিগুলো প্রস্তাবনা আকারে স্মারকলিপি তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। এসময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন এবং আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।
সমাবেশে সংহতি জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী, ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স (বিআইপি), নারীপক্ষ, বারসিক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), পরিজ্ঞা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, দুনিয়াদারি আর্কাইভ, প্রাকৃতিক কৃষি, মিশন গ্রিন বাংলাদেশ, স্ট্যান্ড ফর আওয়ার অ্যান্ডোন্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফ (সিড), গ্রিন ভয়েস, সিআরবি রক্ষা আন্দোলন-চট্টগ্রাম, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলন, বায়ুমণ্ডলীর দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বরেন্দ্র ইউথ ফোরাম, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, প ফাউন্ডেশন, ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ), নাট্যদল প্রাচ্যনাট, জলপুতুল পাপেট স্টুডিও, সেভ ফিউচার বাংলাদেশ, সবুজ পাতাসহ নানান শ্রেণিপেশার ব্যক্তি ও সংগঠন।
এএসএস/এসএসএইচ