কমিউনিটি পুলিশিংয়ের পরিসর বৃদ্ধি করার সুপারিশ কমিশনের

জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করতে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের পরিসর বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে ছয়টি সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদেন প্রকাশ করা হয়।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদ্যমান কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাপনাকে শুধু অপরাধ নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। তবে জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করতে হলে, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের পরিসর বৃদ্ধি করে একে কার্যকর একটি ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ ব্যবস্থা এবং জবাবদিহিতা বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি। এটি কার্যকর হলে নির্দিষ্ট এলাকায় পুলিশের সার্বিক কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি পুলিশ বাহিনীরও কমিউনিটির প্রতি দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি বিগত সময়ে পুলিশ ও জনগণের মধ্যকার সম্পর্কে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তা সমাজের তৃণমূল পর্যায় থেকে সারিয়ে তোলার একটি টেকসই কৌশল হিসেবে কমিউনিটি পুলিশিংকে বিবেচনা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মুখাপেক্ষী না হয়ে, সমাজে সম্মানিত, সৎ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন
সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, ছাত্রসমাজ আমাদের দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী। ছাত্রসমাজকে কেন্দ্র করে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেমন- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), স্কাউট ইত্যাদি রয়েছে। এসব সংগঠন সাধারণত সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে ছাত্রদের সমন্বয়ে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা এ দেশে প্রচলিত নেই, অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ (স্টুডেন্ট পুলিশ ক্যাডেট) যুক্তরাজ্য (মেট ভলান্টিয়ারস) ও উন্নত বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের দেশে বেসরকারি সিকিউরিটি সার্ভিস রয়েছে, যারা বিভিন্ন অফিস ও বাসাবাড়িতে নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। এ জনগোষ্ঠীকে একটি পদ্ধতিগত কাঠামোর মাধ্যমে জননিরাপত্তা ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করলে জননিরাপত্তা আরও সুসংহত হবে। এছাড়াও কিছু কিছু বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা (এনজিও) মানবাধিকার সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছে এবং কিছু মন্ত্রণালয়ও (মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা মন্ত্রণালয় ইত্যাদি) বিভিন্ন ভূমিকা পালনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অপরাধ দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে দেশে প্রচলিত গ্রাম আদালত ও চৌকিদারি প্রথা বিদ্যমান রয়েছে। এসব স্থানীয় ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করা সম্ভব।
এতে আরও বলা হয়েছে, সার্বিক বিশ্লেষণ এবং দেশের বিদ্যমান জনসম্পৃক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো পর্যালোচনা করে একটি কম্প্রেনসিভ কমিউনিটি পুলিশিং কাঠামো গঠন করা যেতে পারে। এ কাঠামোটি মূলত সহায়ক পুলিশ হিসেবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে এ ধরনের পুলিশিং ব্যবস্থা প্রচলিত হলে স্বাভাবিকভাবেই বাজেট সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের অধীন (উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও পৌরসভা) কর কাঠামোর আওতায় রাজস্ব আহরণপূর্বক ব্যয় নির্বাহ করা যেতে পারে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে কমিউনিটি পুলিশিং ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।
এমএম/এসএসএইচ