দ্রুত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়ালের কর্মীদের পাওনা পরিশোধের দাবি

আসন্ন রোজার আগেই শ্রম আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক-কর্মচারীদের সব বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম। প্রয়োজনে এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ৪০ থেকে ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর, হাসিনা রেজিমের অন্যতম এক মাফিয়া সালমান এফ রহমানেরও শাসন-ত্রাসনের পতন ঘটে। তিনি বর্তমানে কারাবন্দি আছেন।
তারা বলেন, আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য সালমান এফ রহমানের সর্বোচ্চ শান্তি চাই আমরা। বেক্সিমকো দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প গ্রুপ। দেশের রপ্তানি আয়ে এ শিল্প গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে এ শিল্প গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দুর্নীতিবাজ মাফিয়া সালমানের অপরাধের দায় বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারীরা নেবে কেন? সালমানের অপরাধের দায় কোনোভাবেই বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নয়। তাই চলতি মাসের মধ্যে শ্রম আইনের ২০ ধারা মোতাবেক কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও শ্রম উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। অন্যথায় গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম আন্দোলন করতে বাধ্য হবে।
আরও পড়ুন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি নারী নেত্রী মোশরেফা মিশু। তিনি বলেন, বেক্সিমকোর বিষয়ে শেষ কথাটি বলতে চাই। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ৫০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ছিল। বর্তমানে আছেন ৪২ হাজার। আমরা লক্ষ্য করেছি শ্রম উপদেষ্টা গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের দুই সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক সংখ্যা বিষয়ে দুই রকম তথ্য দিয়েছেন। একবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বেক্সিমকোতে ৩০ হাজার শ্রমিক আছে। এর কয়েকদিন পরে আরেক সংবাদ সম্মেলনে বললেন, বেক্সিমকোতে ২৭ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী আছে। এতে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা ভয় পেয়ে ভাবছেন, একটা বিপুল অংশের শ্রমিকদের কিছুই দেওয়া হবে না। শ্রম উপদেষ্টার বক্তব্যে এ ধরনের আলামত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনের নামে মামলা করা আছে। এর পরিণতি কী হবে? গ্রেপ্তারকৃত এবং বেনামে গং দিয়ে যে মামলা করা হয়েছে এর ফল কি দাঁড়াবে?
তিনি আরও বলেন, সামনে রোজা আসছে। এরপরই ঈদ। হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কীভাবে এ দিনগুলো পার করবেন সেই উদ্বেগ নিয়েই আজ আমরা সংবাদ সম্মেলন করছি। শ্রম উপদেষ্টার প্রতি আবেদন রাখছি যেন তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করেন।
এসময় তিনি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে–
১. গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের আশুলিয়া থানা শাখার সভাপতি খোরশেদ আলমসহ বেক্সিমকোর গ্রেপ্তার হওয়া নির্দোষ শ্রমিক-কর্মচারীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
২. শ্রমিক-কর্মচারীদের নামে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের সব পাওনা-ক্ষতিপূরণ অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।
৪. আসন্ন রমজান মাসে সব শিল্প এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা করে স্বল্পমূল্যে রেশনিংয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫. রমজানের মধ্যে দেশের সব কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শহিদুল ইসলাম সবুজ, তাসমিমা আখতার ও রেজাউল ইসলামসহ সংগঠনটির অন্যরা নেতাকর্মীরা।
আরএইচটি/এসএসএইচ