রমজানে চোখ রাঙাচ্ছে লোডশেডিং

জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা না থাকায় রমজানে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হতে পারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ও লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার চিন্তা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি সংকটের প্রধান কারণ অর্থনৈতিক। শুধুমাত্র বিদ্যুতেই সরকারের বকেয়া ৪৩ হাজার কোটি টাকা। রমজান মাসে বিদ্যুতের চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু গ্যাস ও জ্বালানি সংকট থাকায় ১২-১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে না।
এদিকে মার্চ মাসের জন্য গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ৬৪০০ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ৫৫৫৮ মেগাওয়াট ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ৪১৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিপিডিবি।
আরও পড়ুন
কিন্তু ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেসরকারি মালিকানাধীন। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছেই সরকারের বকেয়া ৭ হাজার কোটি টাকা। বকেয়া পরিশোধ না হলে জ্বালানি আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে হিমশিম খাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।
এসির তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি বাড়ালে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব। তাই গ্রাহকরা যেন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসি ব্যবহার করেন এবং দীর্ঘসময় এসি ব্যবহার না করেন সে পরামর্শ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ
অপরদিকে দেশে দিন দিন প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ কমতে থাকায় গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে বিদ্যুতে গ্যাসের চাহিদা ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু এ পরিমাণ চাহিদা সরবরাহ করতে সক্ষম নয় পেট্রোবাংলা। বর্তমানে পেট্রোবাংলা ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। ফলে রমজানের চাহিদা মেটাতে সরকার বাড়তি এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিদ্যুতে মার্চ মাসে ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট ও এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
লোড ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা
সাম্প্রতিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, রমজান মাসে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। অর্থাৎ শহর এবং গ্রামে সমানভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও লোডশেডিং করা হবে।
সে অনুযায়ী লোড ম্যানেজমেন্ট করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, লোড ম্যানেজমেন্ট এর অংশ হিসেবে এলাকা ভিত্তিতে লোডশেডিং করা হবে। এছাড়া, প্রতি গ্রীষ্মে কুলিং লোডের পরিমাণ ৫ থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াট। এসির লোড নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও লোডশেডিং পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। গ্রাহকরা যেন ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রিতে এসি ব্যবহার করেন সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এসির তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি বাড়ালে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব। তাই গ্রাহকরা যেন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসি ব্যবহার করেন এবং দীর্ঘসময় এসি ব্যবহার না করেন সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চাই না কোনো লোডশেডিং হোক। সে লক্ষ্যেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। উপদেষ্টা মহোদয় লোডশেডিং হওয়ার কথা বলেছেন মূলত একটি মানসিক প্রস্তুতি রাখার জন্য। আমরা তেল, গ্যাস, কয়লাভিত্তিক প্রতিটি কেন্দ্রের উৎপাদন বাড়িয়েছি যেন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়।
তিনি বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে কীভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায় সে বিষয়ে আমরা বিতরণ সংস্থারসঙ্গে সভা করেছি। এছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাঠপর্যায়ে যাবো। সাশ্রয় করে লোডশেডিংয়ের মতো পরিস্থিতি যেন না হয়।
ওএফএ/এমএসএ