নিম্নআয়ের মানুষের ওপর জরিপ নিয়ে ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্কের বক্তব্য

ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক (ওয়াইপিএন) পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল উদ্যমী সাবেক শিক্ষার্থীকে নিয়ে গঠিত একটি থিঙ্ক ট্যাংক। এটি সম্প্রতি দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা ও বাজেট প্রত্যাশা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ পরিচালনা করেছে।
নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রচলিত থিঙ্ক ট্যাংকের গতানুগতিক ধারণাকে ভেঙে দিতে চান তারা। এই নন-প্রফিট নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ক্ষেত্র ও পেশার ক্রমান্বয়ে আরও তরুণ যুক্ত হবেন। এটি কোনো প্রফেশনাল চাকরি নয়। তারা কাজের পাশাপাশি চিন্তার এই জায়গায় কাজ করেন। তাদের কোনো অফিস নেই। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাফেতে বসেন। তাদের কার্যক্রম অফলাইনের তুলনায় বেশি অনলাইনভিত্তিক।
ওয়াইপিএন টিমের সদস্যরা জানান, তারা ঢাকা এবং এর বাইরের কমপক্ষে ১৫টি স্থানে সরাসরি নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। জরিপে অংশ নেওয়া পেশাজীবীদের মধ্যে ছিলেন রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিক এবং শিক্ষার্থীরা, যাদের দিনের বেলা কাজের প্রয়োজনে বাইরে থাকতে হয় এবং খাবারের খরচ কমাতে ভাতের পরিবর্তে অন্য খাবার গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
জরিপের ফলাফল এবং নেটওয়ার্কের বক্তব্য তুলে ধরেন ওয়াইপিএন-এর রিসার্চ প্রধান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কে এম ইমরুল হাসান। তিনি বলেন, জনতার অভ্যুত্থানে যখন কোনো সরকার গঠন হয়, তখন জনতার সেই সরকারের প্রতি অন্য সরকারের চেয়ে বেশি অধিকার থাকে। আগামী বাজেটে নিম্নআয়ের মানুষের কি প্রত্যাশা সেটির ওপর আমরা একটা গুণগত জরিপ পরিচালনা করেছি।
ইমরুল হাসান আরও বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে সমতা আর ন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা জানি আইএমএফ থেকে সরকারের প্রতি রাজস্ব বাড়ানোর চাপ আছে। এ চাপের মুখে এনবিআর যেনতেন উপায়ে করের বোঝা না চাপিয়ে, রাজস্ব বৃদ্ধির আরও সৃজনশীল উপায় খুঁজে বের করতে পারে। সরকার এখন পর্যন্ত আয়করের আওতা বাড়াতে পারেনি।
তিনি বলেন, একজন দরিদ্র রিকশাচালক বা শিক্ষার্থী যে দামে এক প্যাকেট বিস্কুট কেনেন, একজন কোটিপতিও একই দামে কেনেন। এখানে ভ্যাটের ক্ষেত্রে সমতা থাকলেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাই আগামী বাজেটে নিম্নআয়ের মানুষের বিকল্প খাবারের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে।
ইমরুল হাসান বলেন, জরিপের ৭০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন বর্তমান সরকার তাদের কষ্ট বুঝবে এবং বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করবে। তবে ৮৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, আগের সরকার তাদের কথা শুনতেন না।
ওয়াইপিএন-এর ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী মো. আকবর হোসেন বলেন, জুলাই স্পিরিটকে ধারণ করে আমি ওয়াইপিএন-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। থিঙ্ক ট্যাংক মানেই আমার মাথায় ভেসে উঠত কিছু প্রবীণ ব্যক্তি ও গতানুগতিক আলোচনা। আমরা জুলাইয়ের মতো অনেক পুরোনো মিথ ভাঙতে চেয়েছি।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের শাহবাগ, লালবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, উত্তরা, বাংলামটর, কাঁটাবন, মগবাজার এবং ঢাকার বাইরের যশোর, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, ঠাকুরগাঁও ও সাতক্ষীরায় এ জরিপ পরিচালিত হয়েছে। জরিপকালে নিম্নআয়ের মানুষের অনেক কষ্টের কথা আমরা শুনেছি এবং পর্যায়ক্রমে সেগুলো জনসম্মুখে তুলে আনব।
প্রোগ্রাম ও পার্টনার্স কো-অর্ডিনেটর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সাদিয়া জিসান ঋতু বলেন, ওয়াইপিএন একটি অলাভজনক উদ্যোগ। আমরা ভালোবেসে কাজের পাশাপাশি এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছি। জুলাই আন্দোলন প্রমাণ করেছে, এ দেশের তরুণরা শুধু জনসংখ্যার হিসাবেই নয়, কর্মেও ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। পলিসি অ্যাডভোকেসি, কমিউনিকেশন এবং কনটেন্টের ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের ভাষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা নতুন প্রজন্মের থিঙ্ক ট্যাংকের মাধ্যমে এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং প্রচলিত থিঙ্ক ট্যাংকের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনতে চাই। আমাদের ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম খুব শিগগিরই চালু হবে এবং সেখানে বৈচিত্র্যপূর্ণ কনটেন্ট পাওয়া যাবে।
ওয়াইপিএন-এর হেড অফ প্রোগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জওয়াং রাখাইন বলেন, সমাজের লুকিয়ে থাকা ইস্যু খুঁজে বের করা সহজ নয়। আমরা এ কাজটি করছি, কারণ আমরা বিশ্বাস করি দেশের জন্য ইতিবাচক চিন্তা করার মতো অনেক মানুষ এখনও আছেন, যারা হয়ত সঠিক তথ্য জানেন না। ওয়াইপিএন সেই জানানোর কাজটি করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবে শুরু করেছি, আমাদের আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবার আমরা এই জরিপের মতোই দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় কিন্তু অবহেলিত বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসব এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের বক্তব্য তুলে ধরব, যা নিয়ে আমরা গবেষণা করব।
জওয়াং রাখাইন বলেন, আপনারা লক্ষ্য করবেন, আমাদের নেটওয়ার্কটি খুবই ইনক্লুসিভ। এখানে আদিবাসী, নারী ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ রয়েছে। যা আমাদের শক্তি। আমরা কমিউনিটিভিত্তিক কষ্ট ও চাওয়াগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরতে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে চাই। অপেক্ষা করুন, আমরা এ জরিপের মতো দারুণ সব প্রো-বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে কাজ করব।
এসএসএইচ