বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের চাহিদার প্রভাব আবাসিকে!

বর্তমানে আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দিনের অধিকাংশ সময় পাইপলাইনে গ্যাস থাকছে না। ফলে রান্নাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাত ও শিল্পে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আবাসিক খাতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। তবে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে ঘাটতি রয়ে গেছে ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের।
সরবরাহকৃত মোট গ্যাসের মধ্যে ৪৩ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে ১৮ শতাংশ, শিল্পকারখানায় এবং অন্যান্য খাতে ২৮ শতাংশ। ফলে আবাসিক খাত পাচ্ছে মাত্র ১১ শতাংশ গ্যাস
পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, সরবরাহ করা মোট গ্যাসের মধ্যে ৪৩ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে, ১৮ শতাংশ শিল্পকারখানায় এবং অন্যান্য খাতে ২৮ শতাংশ। ফলে আবাসিক খাত পাচ্ছে মাত্র ১১ শতাংশ গ্যাস।
ভোগান্তিতে আবাসিক গ্রাহকরা
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বসবাস করেন চাকরিজীবী সেলিনা হোসেন। গ্যাস সংকট নিয়ে তিনি বলেন, অফিসের জন্য সকালে বের হতে হয়। যেহেতু সারাদিন গ্যাস থাকে না, তাই রান্না করাও সম্ভব হয় না। অফিস থেকে ফিরে রাতে রান্নার কাজ সারতে হয়।

গ্যাস সংকটের কারণে শুধু সেলিনা নন, সমস্যায় ভুগছেন রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকার অসংখ্য বাসিন্দা। গৃহিণীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের সংকট চলতে থাকায় দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সহকর্মীদের সঙ্গে মেসে থাকেন জুয়েল আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের রান্নার কোনো লোক নেই। নিজেদেরই রান্না করতে হয়। কিন্তু দিনে গ্যাস থাকে না। তাই রাতে রান্না করে রাখতে হয়। দিনে কোনো খাবার খেতে চাইলে সেটা গরম করেও খাওয়ার উপায় নেই।
আরও পড়ুন
বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা নাইমা রহমান বলেন, সকাল থেকেই চুলায় গ্যাস থাকে না। ফলে খাবার কিনে এনে খেতে হয়। কিন্তু প্রতি মাসে ঠিকই গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে। টাকা দিয়ে যদি গ্যাসই না পাই, তাহলে আমাদের লাভটা কী?
বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাসের ব্যবহার
দিনজুড়ে গ্যাস না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন এলপি গ্যাস। এতে খরচ বেড়ে গেলেও প্রয়োজন মিটছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
বর্তমানে আবাসিকে দুই চুলার মাসিক বিল ১ হাজার ৮০ টাকা। বিইআরসির সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৪৫০ টাকা। তবে সরকারি এই মূল্যে সিলিন্ডার পাওয়া দুষ্কর। সাধারণত ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি দিয়েই গ্রাহকদের সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে হয়
মোহাম্মদপুর এলাকার গ্রাহক আল আমিন বলেন, সরকারি গ্যাস তো সারাদিন থাকেই না, সেটা নিয়ে আর কতদিন ভুগব? তাই এলপি গ্যাস ব্যবহার করছি। খরচ বাড়লেও কিছু করার নেই, ব্যবহার করতেই হবে।
বর্তমানে আবাসিকে দুই চুলার মাসিক বিল ১ হাজার ৮০ টাকা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৪৫০ টাকা। তবে সরকারি এই মূল্যে সিলিন্ডার পাওয়া দুষ্কর। সাধারণত ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি দিয়েই গ্রাহকদের সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে হয়।
রামপুরার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, সব চাপ শুধু গ্রাহকদেরই। সরকারি বিলও প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে, আবার বাড়তি দামে এলপিজিও কিনতে হচ্ছে। অথচ আবাসিকে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ কিছুটা বাড়ালে আমাদের এই ভোগান্তি অনেকটাই কমে যেত।
কি বলছেন সংশ্লিষ্টরা?
আবাসিকে গ্যাস সংকটের প্রধান কারণ মূলত দেশীয়ভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়া। লোডশেডিং পরিস্থিতি এড়াতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকার বিদ্যুৎ খাত ও উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে শিল্প ও কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়েছে। তবে সেটাও চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।
আরও পড়ুন
শিল্পমালিকদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকলেও গ্যাস সংকটে অনেক কারখানা তা চালাতে পারছে না। বাধ্য হয়ে অনেকে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করছেন। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে, গরম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। তবে সেটাও বিপিডিবির প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় গ্যাসকূপ থেকে উৎপাদন কমছে। ফলে চাহিদা মেটাতে সরকার এলএনজি আমদানি বাড়িয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন গ্যাস সংকটের মূল কারণ হচ্ছে সার্বিকভাবে আমাদের উৎপাদন কিছুটা কমে যাওয়া। এলএনজিসহ সবমিলিয়ে এখন ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। তবে আবাসিকের এই সংকট বাড়ত না, যদি বিদ্যুতে গ্যাসের চাহিদা না বাড়ত। বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেখানে কিছুটা বেশি গ্যাস দেওয়া হচ্ছে, ফলে আবাসিকে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে।
তিনি বলেন, শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদা সবসময়ই থাকে। আমরা চেষ্টা করছি গ্যাসকূপগুলো থেকে উৎপাদন বাড়াতে, যাতে আবাসিকসহ সামগ্রিক গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি করা যায়।
ওএফ/এমএসএ
