করোনার পর এবারই সবচেয়ে কম পশু কোরবানি, কারণ কী?

চলতি বছরের ঈদুল আজহায় দেশে কোরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা গত এক দশকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সারাদেশে কোরবানি হয়েছে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু। গত বছরের তুলনায় যা ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৪টি কম। করোনাকালের (২০২০-২১ সাল) পর এটিই সর্বনিম্ন কোরবানি।
সাধারণত প্রতি বছর কোরবানির পশুর সংখ্যা বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। তবে এ বছর সেই ধারায় ব্যতিক্রম ঘটেছে। ২০২০ সালে করোনার প্রভাবের কারণে কোরবানির সংখ্যা কমে দাঁড়ায় প্রায় ৯৪ লাখে। ২০২১ সালে তা আরও নেমে আসে ৯০ লাখে।
পরবর্তী দুই বছর-২০২২ ও ২০২৩ সালে এ সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে এবং ২০২৩ সালে তা ছাড়ায় ১ কোটি। ২০২৪ সালে কোরবানি হয় ১ কোটি ৪ লাখের বেশি পশু। কিন্তু এ বছর কোরবানির সংখ্যা আবার কমে এসেছে ৯১ লাখে।
আরও পড়ুন
কেন কমলো কোরবানি?
কোরবানি কমে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এবারের কোরবানিতে প্রভাব পড়েছে।

তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মী পলাতক রয়েছেন। তাদের অনেকে আয়হীন অবস্থায় আছেন। ফলে তারা এবার কোরবানি দেননি। কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন-স্বাভাবিকভাবেই তারা দেশে পশু কোরবানি করেননি। এটি কোরবানির মোট সংখ্যায় প্রভাব ফেলেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর তুলনামূলকভাবে ছাগল ও ভেড়ার কোরবানি কম হয়েছে। মানুষ প্রতিবছর যারা একা কোরবানি দিতেন, তাদের অনেকেও এবার যৌথভাবে দিয়েছেন। বড় গরুর বিক্রিতেও ধীরগতি ছিল। অবিক্রিত পশুর সংখ্যাও বেশি।
তিনি বলেন, এ বছর কোরবানি কম হওয়ার পেছনে আর্থিক, সামাজিক কিংবা পরিবর্তিত পরিস্থিতির কোনো প্রভাব আছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখবো।
কোন বছর কত কোরবানি?
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশে ৯৮ লাখ ১৩ হাজার পশু কোরবানি হয়। এর পরের ৩ বছর কোরবানির সংখ্যা প্রতি বছরই ১ কোটির বেশি ছিল।
২০১৭ সালে দেশে মোট ১ কোটি ৪ লাখ পশু কোরবানি হয়। ২০১৮ সালে ১ কোটি ৬ লাখ এবং ২০১৯ সালে ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার পশু কোরবানি হয়।
তবে করোনা মহামারির ধাক্কায় কমে যায় এ সংখ্যা। ২০২০ সালে আগের বছরের চেয়ে ১১ লাখ ৬৪ হাজার পশু কম কোরবানি হয়। ওই বছরের মার্চ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে কোরবানি কমে দাঁড়ায় ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি।
২০২১ সালেও করোনা মহামারি অব্যাহত থাকে। ওই বছর আরও কমে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু কোরবানি হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, করোনা মহামারির দুই বছর দেশে লকডাউনে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে আয়। তাই কোরবানির সংখ্যাও কমে।
করোনা মহামারির পর থেকে কোরবানির সংখ্যা আবারও বাড়তে থাকে। ২০২২ সালে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি এবং ২০২৩ সালে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি হয়।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালে সারা দেশে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮টি পশু কোরবানি হয়েছিল। আর এবার এই সংখ্যা ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি।
সে হিসাবে এ বছর পশু কোরবানি কমেছে ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৪টি।
আরও পড়ুন
এবার ৩৩ লাখ পশু অবিক্রিত
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানির পশু অবিক্রিত ছিল ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৬০৩টি।
কারণ হিসেবে অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার কোরবানির পশুর উৎপাদন বেশি ছিল। তাই পশু অবিক্রিত থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে অবিক্রিত এসব পশু সামনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দরকার পড়বে বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

সবচেয়ে কম আর বেশি কোরবানি কোথায়?
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার সবচেয়ে কম ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩টি পশু কোরবানি হয়েছে সিলেট বিভাগে। এরপর কম পশু কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে- ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৬২টি।
আর সবচেয়ে বেশি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭১টি পশু কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। ঢাকা বিভাগে কোরবানি হয় ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০টি পশু।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩২টি, খুলনা বিভাগে ৮ লাখ ৪ হাজার ২২৪টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৭৮৩টি এবং রংপুর বিভাগে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯টি পশু কোরবানি হয়।
এসএইচআর/এমএসএ
