লবণাক্ততা–তাপপ্রবাহে নারীদের প্রজনন ঝুঁকি ২.৩ গুণ, বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত বাংলাদেশে নারীদের প্রজননস্বাস্থ্যে দ্রুত বাড়ছে, আর এ ঝুঁকি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপকূলীয় লবণাক্ততা ও তাপপ্রবাহ নারীদের প্রজননস্বাস্থ্য জটিলতা ২.৩ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ব্রাজিলের বেলেমে কপ৩০–এ বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব তথ্য জানান। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে সিপিআরডি, ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ও এইচইকেএস/ইপিইআর। এতে অংশ নেন নীতিনির্ধারক, গবেষক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সহযোগীরা।
অনুষ্ঠানে সিপিআরডির সহকারী ব্যবস্থাপক (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) শেখ নুর আতিয়া রাব্বি জানান, উপকূলীয় এলাকার ৪০০ প্রজননক্ষম নারীর ওপর করা গবেষণায় মাসিকের অনিয়ম, গর্ভধারণের জটিলতা, সংক্রমণ, খাদ্য–পানি অনিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ লবণাক্ত অঞ্চলে নারীদের পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ (পিআইডি)-এর ঝুঁকি ২.৩ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। জলবায়ুজনিত দীর্ঘমেয়াদি চাপ গর্ভপাত ও প্রাক-প্রসবের মতো নেতিবাচক গর্ভাবস্থার ঘটনাও বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, এত বড় সংকেত থাকা সত্ত্বেও জাতীয় জলবায়ু নীতি ও অর্থায়ন কাঠামোয় নারীস্বাস্থ্যের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি।
নীতি–অর্থায়নে বড় ফাঁক
গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক ড. জেনি মিলার বলেন, সদ্য চালু হওয়া গ্লোবাল হেলথ অ্যাডাপটেশন প্ল্যান তখনই কার্যকর হবে যখন জাতীয় পরিকল্পনা স্থানীয় বাস্তবতা অনুযায়ী তৈরি হবে এবং উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুত অনুদান সময়মতো দেবে। তার মতে, নারীরা শুধু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী নন—অভিযোজনের মূল চালকও।
সিএমসিসির পরিবেশ অর্থনীতিবিদ ও এলএসই-এর ভিজিটিং সিনিয়র ফেলো ড. সৌর দাসগুপ্ত বলেন, ২০২৪ সালের তাপপ্রবাহে বাংলাদেশ ২৯ বিলিয়ন সম্ভাব্য কর্মঘণ্টা হারিয়েছে, যা জিডিপির প্রায় ৫%। ২০২৩ সালে অতিরিক্ত ২০ লাখ মানুষ খাদ্য অনিরাপদ হয়েছে।
এ সময় তিনি জাতীয় তথ্যব্যবস্থাকে গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন (জিজিএ)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য করার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো ড. বিশ্বাস চিতালে বয়স–লিঙ্গভিত্তিক স্বাস্থ্যতথ্য আলাদা করে সংগ্রহ, জলবায়ু-সহনশীল স্বাস্থ্য নজরদারি তৈরি এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকি পূর্বাভাসে এআই ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন।
‘ঋণ নয়, অনুদান’ বাংলাদেশের অবস্থান
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল বলেন, স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য–জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (Health-NAP) গ্রহণের ফলে নারীস্বাস্থ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মূল নীতিকাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দরকার মাপযোগ্য ও পূর্বানুমানযোগ্য অভিযোজন অর্থায়ন—যা ঋণ নয়, অনুদান হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, গত বছর ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হয়েছে, যা অভিযোজন সক্ষমতাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তিনি নারীদের জলবায়ু–প্রণোদিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং জিজিএ স্বাস্থ্য সূচকের সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর জোর দেন।
টিআই/এমএন