বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি কমাতে বীমা ভিত্তিক ব্যবস্থার তাগিদ

ক্রমবর্ধমান জলবায়ু দুর্যোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশে ক্লাইমেট রিস্ক ইন্স্যুরেন্স (সিআরআই) চালু ও এর বিস্তার জরুরি বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা।
তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে বীমাভিত্তিক আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য এ ধরনের বীমা ব্যবস্থাকে জাতীয় পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ‘জলবায়ু ঝুঁকি বীমাতে (সিআরআই) মিডিয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি জাতীয় কর্মশালায বক্তারা এসব কথা বলেন। কর্মশালাটি আয়োজন করে বাংলাদেশে অক্সফাম, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি), ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ও নদীভাঙনের মতো দুর্যোগে প্রতিবছর দেশের প্রায় ১ শতাংশ জিডিপি ক্ষতি হয়েছে। এত বড় ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও দেশে বীমা কাভারেজ খুবই সীমিত। বর্তমানে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আওতা জিডিপির মাত্র ০.৪৮ শতাংশ, যার ফলে জলবায়ুজনিত দুর্যোগের পর কোটি কোটি মানুষ আর্থিক সংকটে পড়ছে।
অনুষ্ঠানে ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি ও জীবিকা হারাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং টেকসই বীমা কাঠামো গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক খাতকেও অভিযোজিত হতে হবে। জলবায়ু বীমা দরিদ্র পরিবারগুলোকে দুর্যোগের পর ঋণের ফাঁদে পড়া থেকে রক্ষা করতে পারে। তিনি বিশেষভাবে নারীদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে। সময়মতো সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে তাদের জীবিকা রক্ষা সম্ভব, যা দেশের অর্থনীতির জন্যও বড় সম্ভাবনা তৈরি করবে।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন অক্সফাম ইন বাংলাদেশের ইনফ্লুয়েন্সিং, কমিউনিকেশন, অ্যাডভোকেসি ও মিডিয়া প্রধান মো. শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে শুধু দুর্যোগ-পরবর্তী ক্ষতিপূরণ নয়, বরং আগাম সুরক্ষা, ন্যায্য অর্থায়ন ও সমাধানভিত্তিক রিপোর্টিংয়ে মনোযোগ দিতে হবে।
ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের প্রোগ্রাম পলিসি অফিসার নরুল আমিন বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে অনিশ্চিত মানবিক সহায়তার অপেক্ষায় থাকতে হবে এটা কাম্য নয়। সিআরআই দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বানুমেয়তা নিশ্চিত করে, আর এটি জানাতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বলেন, আমরা অর্থনৈতিক সাংবাদিকরা জটিল আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে জননীতির সেতুবন্ধন তৈরি করি। জলবায়ু বীমাকে উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে নয়, বরং জনগণের আর্থিক ন্যায্যতা হিসেবে তুলে ধরার সময় এসেছে।
অক্সফাম ইন বাংলাদেশের ক্লাইমেট জাস্টিস ও ন্যাচারাল রিসোর্স রাইটস প্রধান ড. মোহাম্মদ ইমরান হাসান বলেন, জলবায়ু সংকট তৈরি করেনি বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, কিন্তু তারাই সবচেয়ে বেশি মূল্য দিচ্ছে।
সিআরআই নিশ্চিত করতে হবে যেন সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের কাছেই পৌঁছায় এবং এই পরিবর্তনে মিডিয়া বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এসআই/এমএন