মিতু হত্যা

বাবুলের ‘প্রেমিকা’ গায়ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে ইউএনএইচসিআর

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ আগস্ট ২০২১, ০২:৫১ এএম


বাবুলের ‘প্রেমিকা’ গায়ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে ইউএনএইচসিআর

বাবুল আক্তার গায়ত্রী অমর সিং

মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের প্রেমিকা গায়ত্রী অমর সিং সম্পর্কে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টমেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, গায়ত্রী অমর সিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ে ২৩ মে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। এর প্রেক্ষিতে গায়ত্রী বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়ের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি। এগুলো মামলার তদন্তে অনেক কাজে আসবে। গত জুলাই মাসের শেষের দিকে ইউএনএইচসিআর থেকে চিঠির উত্তরটি পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, চিঠিতে গায়েত্রীর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেনি সংস্থাটি। তবে গায়ত্রী আর ইউএনএইচসিআরে কাজ করে না বলে জানানো হয়েছে। 

মামলার চার্জশিট কখন দেওয়া হবে জানতে চাইলে সন্তোষ কুমার বলেন, মামলার তদন্ত কাজ গোছাচ্ছি।

উল্লেখ্য, বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে- গায়েত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে বাবুল আক্তারের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গায়েত্রী তখন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। আর বাবুল আক্তার তখন কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখনই তার সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পর্ক হয় বলে অভিযোগ করেছিলেন বাবুল আক্তারের শ্বশুর।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, মামলার এজাহার থেকে ও তদন্ত চলাকালে সংস্থাটি ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কক্সবাজারে কাজ করা গায়েত্রীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কিছু তথ্য জানতে পারে। মূলত এ কারণেই গায়েত্রী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে ইউএনএইচসিআরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত ১২ মে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন উল্লেখ করেছেন, গায়েত্রীর সঙ্গে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। 

বাবুলের বিরুদ্ধে শ্বশুরের দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বাবুল আক্তার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজার জেলায় চাকরি করার সময় তার সঙ্গে গায়েত্রীর দেখা হয়। সেখানে তাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টে একান্ত সময় কাটিয়েছেন বলেও পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানা যায় ২০১৪ সালে। ওই সময় বাবুল সুদানে জাতিসংঘের মিশনে যান। তখন তার বাসায় দুটি বই উপহার পাঠান গায়েত্রী। এছাড়া বাংলাদেশে রেখে যাওয়া বাবুলের মোবাইলে ২৯টি মেসেজও পাঠান তিনি। সর্বশেষ মিতু হত্যার কয়েক মাস আগে বাবুল একটি ট্রেনিংয়ে থাকা অবস্থায় গায়েত্রী বাবুলের বাসায় দুটি বই উপহার পাঠান। বই দুটির নাম- তালেবান ও বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট।

তালেবান বইটির তৃতীয় পৃষ্ঠায় গায়েত্রী নিজ হাতে একটি বার্তা লিখে দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমাদের ভালো স্মৃতিগুলো অটুট রাখতে তোমার জন্য এই উপহার। আশা করি, এই উপহার আমাদের বন্ধনকে চিরস্থায়ী করবে। ভালোবাসি তোমাকে, গায়েত্রী।’ 

একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় গায়েত্রী তাদের প্রথম দেখা, প্রথম এক সঙ্গে কাজ করা, প্রথম কাছে আসা, মারমেইড হোটেলে ঘোরাফেরা, রামু মন্দিরে প্রার্থনা, রামুর রাবার বাগানে ঘোরাফেরা ও চকরিয়ায় রাতে সমুদ্রের পাশ দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি স্মৃতির কথা উল্লেখ করেন।

এছাড়া বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট নামের বইয়ের দ্বিতীয় পাতায় গায়েত্রীর নিজ হাতে ‘তোমার ভালোবাসার গায়েত্রী’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা) লিখেন।

মামলার এজাহারে মিতুর বাবা জানান, এসব ঘটনায় বাবুল ও মিতুর পরিবারে অশান্তি চরমে পৌঁছে। বাবুলের এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে তিনি মিতুকে নির্যাতন করেন বলে মিতু মৃত্যুর আগে জানিয়েছিল।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১১ মে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

পরে ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে আছেন।

কেএম/ওএফ

Link copied