উপহারের টিকার বড় চালান বাংলাদেশকেই দিল ভারত : হাইকমিশনার

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় ভারত সবচেয়ে বড় চালানের ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে বাংলাদেশে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ২০ লাখ ভ্যাকসিন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘ভারতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর চারদিনের মাথায় বাংলাদেশে ২০ লাখ ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে পাঠানো হলো। এটা ভারত সরকারের দেওয়া প্রথম এবং সবচেয়ে বড় চালান।’
করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিরোধে উপহার হিসেবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে হস্তান্তর করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে এ টিকা হস্তান্তর করেন। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
বন্ধুত্বের শুভেচ্ছা হিসেবে ভারত প্রতিবেশী ১২টি দেশকে বিনামূল্যে করোনার টিকা উপহার দিচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল বাংলাদেশের আগে ভুটান ও মালদ্বীপে বেশ কয়েক লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছে ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পেল সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তথা ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন।
বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশকে প্রথম চালানের ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক যে অবস্থান তা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের গুরুত্বের কথা ভেবে মানুষের জন্য ভারত এসব উপহার দিয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আমি আশা করছি, বাংলাদেশ খুব দ্রুতই ভ্যাকসিনেশন শুরু করবে।’
করোনা মহামারির এক বছরে বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে কাজ করেছে জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করেছে। এই মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করে যাবে।’
এ সময় হাইকমিশনার মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীসহ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরের সম্পর্কের বিষয়টি তুলে আনেন।
এর আগে, বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১২৩২ ফ্লাইটে টিকাগুলো বাংলাদেশে আসে। ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে ফ্লাইটটি মুম্বাই থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ নামে বাজারজাত করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। গত শনিবার থেকে এ টিকা ভারতের মানুষকে দেওয়া শুরু হয়েছে। উপহারের বাইরে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনটি বাণিজ্যিকভাবে তিন কোটি ডোজ পাওয়ার জন্য গত ৫ নভেম্বর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। চুক্তি অনুসারে প্রথম ধাপে প্রত্যেক মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। এ মাসেই এর প্রথম চালান আসার কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা খুবই ভাগ্যবান। ভারত আমাদের ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার দিয়েছে। আমরা এটার জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা খুব খুশি এই মাসে আরও ৫০ লাখ ভ্যাকসিন দেশে আসবে। তিন কোটির যে চুক্তি সেটাও আসবে।’
ভারত থেকে পাওয়া উপহারের পর দেশটি থেকে বেসরকারিভাবে চুক্তি হওয়া ভ্যাকসিন আসতে থাকবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের আগে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মোমেন। তিনি বলেন, ‘এখনও বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করতে পারেনি। আমরা আগেভাগে পেয়েছি, ভারতের সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে। আমরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করে দেব।’
ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত আমাদের ৭১ সালে সহযোগিতা করেছে, এখন করোনা মহামারির সময়েও তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দুই দেশের যে শক্তিশালী সম্পর্ক এই সময়ে এটা তার প্রমাণ।’
দেশে করোনা মহামারি দূর হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মোমেন। তিনি বলেন, ‘কোভিড এমনিতেই দূর হয়ে যাবে। আমাদের ভ্যাকসিন এসে গেছে। আমাদের সবার দায়িত্ব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া। আমরা চাই, আমাদের দেশে প্রত্যেক লোক কোভিডমুক্ত হবে।’
এনআই/এফআর