নিজেদের রক্ষাকবচ ঠিক রেখেই সম্মতি জানাবে ঢাকা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিজেদের রক্ষাকবচ বা নিরাপত্তা বেষ্টনী ঠিক রেখেই সামনে এগোবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করছে বলেও জানান সচিব।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য মার্কিন অনুদান বিষয়ক লিহে চুক্তির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠকে শেষে এসব কথা বলেন সচিব।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একটা আইন আছে লেহি’ল। সেই ল’য়ের ব্যাপারে আমাদের যুক্ত করতে চায়। এ ব্যাপারে আমরা একটা কনসালটেশন করছি আমাদের বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে। গত সপ্তাহে একটা হলো, আজ আরেকটা হলো। নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের যে সহযোগিতা, কীভাবে তা ব্যবহৃত হবে আগামীতে এটা তারা জানতে চায়। যদি তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকে তাহলে কোথায় আমরা সেগুলো ব্যবহার করব, ওই বিষয়ে তাদের কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো আমাদের আগেই জানিয়ে দেবে। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবহার করব। এটা করলে আমাদের কী লাভ সেটা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এতে কিছু বিধান আছে। আমাদের নিজেদের বেসিক যেসব প্রিন্সিপাল আছে তার ভিত্তিতে সার্বিকভাবে আমাদের ল’ অ্যান্ড এনফোর্সমেন্টের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে এনগেজমেন্টগুলো আছে সেগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি-না, বিষয়গুলা আমরা দেখছি। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর চায়। এটা শুধু বাংলাদেশ না, অনেক দেশ আছে। আমরাও সেই প্রক্রিয়ায় আছি। আমরা আমাদের সেইফ গার্ডগুলো রেখেই আমাদের রেসপন্সগুলো দেব।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সহযোগিতা পেতে হলে চুক্তি করার প্রস্তাব ও আগে বাংলাদেশকে সামরিক খাতে যেসব অনুদান দিয়েছে তার হিসেব চেয়ে চলতি মাসের শুরুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চুক্তির অনুরোধ করেছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও ১৫ দিন সময় চেয়েছে। সে অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে চুক্তি করতে হবে।
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ জবাব দিবে কিনা- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এটা ঠিক চুক্তি না। সম্মতি জানানো। আলাদা করে কোনো চুক্তি নয়। এ বিষয়টা আসার পর থেকে আমরা বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ওরা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে একটা জবাব চেয়েছে, সেটা আমরা একটা সময় নিয়েছি ৩১ ডিসেম্বর। ১ জানুয়ারি থেকে এটা শুরু হবে। আমরা চেষ্টা করব ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দিতে। আজকে যে আইডিয়া পেয়েছি, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেই ল্যাঙ্গুয়েজের ওপরে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘হিউমেন রাইটসের ব্যাপারে আমাদের যে কমিটমেন্ট, একইসঙ্গে টেররিজম বা অন্যান্য সিরিয়াস ক্রাইম আছে সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের যে জিরো টলারেন্স এগুলো নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের যে সহযোগিতা রয়েছে; সেগুলো নিয়ে আমরা কীভাবে কাজ করতে পারি আলাপ-আলোচনা চলছে। সামনে আরও একটা মিটিং আছে। আমরা শিগগিরই তাদেরকে (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের যে পয়েটগুলো আছ, আমাদের বিষয়গুলো হাইলাইটস করে সকলের জন্য ভালো হয় বা আগামীতে যেন এনগেজমেন্টগুলো চলতে থাকে সে বিষয়টাতে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র লিহে নামক আইনের সংশোধনী আনা হয়েছে। আইনের সংশোধনীতে অনুদান পাওয়া দেশগুলোর কোন সংস্থা অনুদানের অর্থ পাচ্ছে, সেটি জানার জন্য চুক্তি করার বিষয়ে একটি ধারা সংযোজিত হয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশকেও এ চুক্তির আওতায় আসতে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য বলছে, ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে দুটি হ্যামিলটন কাটার নৌ জাহাজ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ৫০টি মাল্টি রোল আর্মাড পার্সোনাল ক্যারিয়ার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি দেশটির কাছ থেকে ২০১২ সালে ১৮ কোটি ডলারের চারটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান পেয়েছে বাংলাদেশ।
এনআই/ওএফ