সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগে বাড়ছে মৃত্যু, কেন?

বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ বলা হয়েছে তিনটি—সংক্রামক রোগ, অসংক্রামক রোগ এবং আঘাত ও দুর্ঘটনা। সারা বিশ্বে বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। আকস্মিক দুর্ঘটনায় অনেকে মারা যান বটে, তবে ৪৫০টির বেশি রোগ ও আঘাতজনিত কারণে ভুক্তভোগী হয়ে অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটে। কোন কোন রোগে, কী অবস্থায় মানুষের মৃত্যু ঘটছে, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ইন্সটিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের নেতৃত্বে নেওয়া এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশে বছরে আনুমানিক ৮ লাখ ৪৭ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। আর এর পেছনে আছে ২২৬টি রোগ ও আঘাতের কারণ। ৬২টি ব্যাধিকে ৭টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে—এইচআইভি–এইডস ও যক্ষ্মা; ডায়রিয়া, নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও অন্যান্য সাধারণ সংক্রামক ব্যাধি; অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ ও ম্যালেরিয়া; মাতৃরোগ; নবজাতকের রোগ; অপুষ্টিজনিত রোগ এবং অন্যান্য সংক্রামক; মাতৃ, নবজাতক ও অপুষ্টিজনিত রোগ। অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ ও ম্যালেরিয়ার শ্রেণিতে ইয়োলো ফিভার ছাড়া আর সব কটির প্রাদুর্ভাবই বাংলাদেশে আছে।
অসংক্রামক রোগের পাল্লা সবচেয়ে বেশি ভারী। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অসংক্রামক রোগগুলোর ১০টি শ্রেণি। এই গুলোয় যত রোগ আছে, তার ১৩০টিতে বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যু হয়। এসবের মধ্যে আছে ক্যানসার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অস্থিসংক্রান্ত ব্যাধি, সিরোসিস ও অন্যান্য যকৃতের রোগ এবং পরিপাকতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ও দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এসবের সঙ্গে আরও আছে মানসিক রোগ।
বাংলাদেশে একসময় কলেরা বা ম্যালেরিয়ার মতো সংক্রামক রোগে মানুষের মৃত্যু হতো বেশি। বিজ্ঞানের উৎকর্ষ ও রোগ ব্যবস্থাপনার বিকাশের কারণে সংক্রামক রোগে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। বিপরীতে গড় আয়ু বৃদ্ধি, জীবনযাপনে পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারণে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এসব রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে।
২০০৯ ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণের তালিকা দিয়েছে দ্য ইন্সটিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের।
২০০৯ সালে মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণ ছিল স্ট্রোক, স্কেমিক হার্ট ডিজিজ, নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যক্ষ্মা, ডায়রিয়াজনিত রোগ, সিরোসিস, ডায়াবেটিস, নবজাতকের অসুখ এবং পানিতে ডোবা।
২০১৯ সালে মৃত্যুর প্রধান ১০ কারণ ছিল স্ট্রোক, স্কেমিক হার্ট ডিজিজ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ, নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়াজনিত রোগ, যক্ষ্মা, সিরোসিস, ক্যানসার ও নবজাতকের অসুখ।
আঘাত ও দুর্ঘটনাও আছে বহু ধরনের। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যু, এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত। এসব ধরন আছে মোট ৩৪টি। এই ৩৪ ধরনকে ৪টি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে—সড়ক দুর্ঘটনা; অনিচ্ছাকৃত আঘাত; নিজেকে নিজে আঘাত ও আন্তর্ব্যক্তিক সহিংসতা এবং বলপ্রয়োগ; দ্বন্দ্ব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড; মৃত্যুদণ্ড ও পুলিশি সংঘাত।
প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ৪ কোটি লোক অসংক্রামক রোগের কারণে মারা যায় যা বিশ্বের মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর হার বাড়ে। প্রতি বছর ৩০-৬৯ বছর বয়সী দেড় কোটি লোক অসংক্রামক রোগে মারা যাচ্ছে; এই অকালমৃত্যুর ৮৫ শতাংশ ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয়।
বাংলাদেশে বছরে আনুমানিক ৮ লাখ ৪৭ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। আর এর পেছনে আছে ২২৬টি রোগ ও আঘাতের কারণ। ৬২টি ব্যাধিকে ৭টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে...
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বিশ্বের মোট রোগের ৮০ শতাংশই হবে এই অসংক্রামক রোগ। বিশ্বের অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধির হার সবচেয়ে দ্রুত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশের মানুষের মৃত্যুর প্রধান ১৫টি কারণের একটি তালিকা প্রকাশ করে। স্ট্রোক ছিল সেই তালিকায় শীর্ষে। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যুর শীর্ষতম কারণ স্ট্রোক। স্ট্রোকের দুটি ধরন।
একটি রক্তনালি ফেটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, আরেকটি মস্তিষ্কের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া। দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ।
অন্য কারণগুলো ছিল—হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, সিরোসিস, অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধি, খাদ্যনালির ক্যানসার, কিডনির রোগ, আত্মহত্যা, ফুসফুসের ক্যানসার, জরায়ু মুখের ক্যানসার, ডায়রিয়াজনিত রোগ, সড়ক দুর্ঘটনা ও পতনজনিত মৃত্যু।
বাংলাদেশে ৩৮ ধরনের ক্যানসারে মানুষ মারা যান। মৃত্যু ছাড়াও রোগের কারণে মানুষকে দীর্ঘ সময় অসুস্থ অবস্থায় জীবনযাপন করতে হয়। অনেকে শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালের শীর্ষ ১০টি স্বাস্থ্যঝুঁকির তালিকায় ছিল অপুষ্টি, বায়ুদূষণ, উচ্চ রক্তচাপ, তামাক, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, রক্তে অতিমাত্রায় শর্করা, স্থূলতা (Obisity), পেশাগত ঝুঁকি, পয়োব্যবস্থা এবং উঁচু মাত্রার এলডিএল।
২০৫০ সালে বাংলাদেশে ষাটোর্ধ্ব লোকের সংখ্যা হবে মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ (২১.৮ কোটি) যারা নির্ভরশীল জনসংখ্যা এবং অসংক্রামক রোগের বোঝা বাড়াবে।
খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও বায়ুদূষণসহ নানা কারণে দেশের তরুণদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তরুণ প্রজন্মকে এই স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। রোগ ও প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশে কর্মক্ষমতা হ্রাসের হিসেবে অসংক্রামক রোগ ৬১ শতাংশ দায়ী।
আরও পড়ুন
এখনই গুরুত্ব দিয়ে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ না করা হলে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এসব রোগের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। ফলে, কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা কমবে এবং সার্বিকভাবে দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর চাপ বৃদ্ধি পাবে।
অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিসমূহ কমাতে হলে একে সামগ্রিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে, যার মধ্যে স্বাস্থ্য ছাড়াও অর্থ, যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষি, পরিকল্পনা ও অন্যান্য খাতকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। ব্যবস্থাপনার আওতায় রোগ নির্ণয়, স্ক্রিনিং, চিকিৎসা এবং উপশমক যত্নকে নিয়ে আসতে হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও সময়োপযোগী চিকিৎসা-অসংক্রামক রোগ কমাবার অন্যতম উপায় হতে পারে এবং সেটা প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের মাধ্যমেই সম্ভব। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য এখন যেটি প্রয়োজন, সেটি হচ্ছে, বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং যেসব দুর্বলতা আছে সেগুলো সমাধানের জন্য কৌশল নির্ধারণ করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, সংক্রামক রোগ মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। প্রতিটি সংক্রামক রোগের সাথে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলার জন্য একযোগে ব্যবস্থা নিতে হয়। একদিকে, টিকা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকলেও, অপরদিকে বিশ্বব্যাপী মহামারী গড়ে ওঠে, যেমন COVID-19।
এই সংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তাদের সংক্রমণ ক্ষমতা। একটি জীবাণু যখন এক ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে, তা অন্য ব্যক্তির শরীরেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
সংক্রামক রোগগুলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা শরীরে প্রবেশ করে এবং সেখানে বংশ বৃদ্ধি পায়। এই রোগগুলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে, যেমন শ্বাসতন্ত্রের রোগ (Flu, COVID-19) শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বেশকিছু সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে, লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার আগে রোগী অন্যদের মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে, যেমন COVID-19-এ লক্ষণ প্রকাশের আগেই একজন ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে। এসব রোগ আমাদের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটায়, যা কখনো কখনো মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এছাড়া, অনেক সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে ভাইরাসের মিউটেশন ঘটতে পারে, যা তাদের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধী পদক্ষেপ ছাড়া সংক্রমণের বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
এই সংক্রামক রোগগুলো সাধারণত চারটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাল, ছত্রাকজনিত এবং পরজীবী। প্রতিটি শ্রেণির রোগের আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে এবং এই রোগগুলোর চিকিৎসা ও প্রতিরোধ পদ্ধতি ভিন্ন।
ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ:
ব্যাকটেরিয়া হলো একধরনের জীবাণু যা শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ ঘটায়। এটি সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। কিছু সাধারণ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: যক্ষ্মা/টিউবারকিউলোসিস (TB): একটি ব্যাকটেরিয়াল রোগ যা ফুসফুসে সংক্রমণ সৃষ্টি করে। নিউমোনিয়া (Pneumonia): ফুসফুসের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা শ্বাসকষ্ট ও তীব্র জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
ভাইরাল সংক্রমণ:
ভাইরাস মানুষের কোষে প্রবেশ করে এবং সেগুলো ধ্বংস করতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাল সংক্রমণ: ইনফ্লুয়েঞ্জা (Flu): শীতকালে সাধারণ ভাইরাল রোগ যা জ্বর, কাশি ও গলা ব্যথা সৃষ্টি করে। COVID-19: একটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাল রোগ যা novel SARS-CoV-2 ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি হয়। ডেঙ্গু (Dengue) : ভাইরাসবাহিত এডিস মশার (বিশেষ করে এডিস ইজিপ্টাই) মাধ্যমে ছড়ায়।
ছত্রাকজনিত সংক্রমণ:
ছত্রাকের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ হতে পারে। কিছু সাধারণ ছত্রাকজনিত রোগ: অ্যাথলেট ফুট: পায়ের ফাঙ্গাল সংক্রমণ। ক্যান্ডিডিয়াসিস: একটি ছত্রাকজনিত রোগ যা শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে, যেমন কিডনি, লিভার, হাড়, চোখ ইত্যাদি আক্রান্ত হতে পারে।
পরজীবী সংক্রমণ:
পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট রোগগুলো সাধারণত বাহ্যিক পরিবেশ থেকে শরীরে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে। ম্যালেরিয়া: মশার মাধ্যমে সংক্রমিত একটি মারাত্মক রোগ। এলিসথিয়াসিস: পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ যা মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পাঁচটি কর্মকৌশলের নীতিমালা নির্দিষ্ট করা হয়েছে—দ্রুত শনাক্তকরণ ও উৎস নিয়ন্ত্রণ, সব রোগীর জন্য মানসম্মত আদর্শ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োগ, সন্দেহজনক রোগীর জন্য পরীক্ষামূলক অতিরিক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পাদন, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত ও প্রকৌশলগত প্রতিরোধ।
...এই সংক্রামক রোগগুলো সাধারণত চারটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাল, ছত্রাকজনিত এবং পরজীবী।
শ্বসনসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি উৎসাহিত করা প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাশি বা হাঁচির সময় নাক-মুখ টিস্যু বা গোটানো কনুই দিয়ে ঢেকে রাখুন, হাঁচি–কাশি রোধ করার চেষ্টা করুন, শ্বসনসংক্রান্ত রসের সংস্পর্শের পর স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী হাত ধুয়ে নিন। যথাযথভাবে হাত ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ।
দেশে ১১০টির বেশি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আছে। এখানে সীমিতভাবে সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ে পড়ানো হয়, কিন্তু তাদের সংযুক্ত হাসপাতালে সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসার বিভাগ বা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা অপ্রতুল বা নেই বললেই চলে। প্রকৃতপক্ষে সংক্রামক ব্যাধিগুলো যথাযথভাবে শনাক্তকরণ এবং তার চিকিৎসায় সেভাবে কোনো বিশেষায়িত বিভাগ নেই।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবাণুঘটিত রোগের ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ পৃথক সংক্রামক ব্যাধি বিভাগ খোলা প্রয়োজন। যেমন মেডিকেল কলেজে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ থাকলেও সেটা মূলত বিষয়ে পড়ানোর জন্য, জীবাণুঘটিত রোগের ল্যাবরেটরি পরীক্ষার জন্য নয়।
বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে সংক্রামক ব্যাধি নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল ও স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, সংক্রামক ব্যাধি কখনো শেষ হবে না। এর হুমকি সব সময় থেকে যাবে। বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে অত্যাধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে রোগ শনাক্ত করার ব্যবস্থা রাখা।
সংক্রামক রোগ নির্ণয় করতে হলে জীবাণু শনাক্ত করতে হবে। আর সে জন্য মাইক্রোবায়োলজিস্টদের কর্মক্ষেত্র বাড়াতে হবে। আমরা প্রতিরোধে এগিয়েছি, কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা সংক্রামক রোগ নির্ণয়ে ও চিকিৎসায় কিছুটা পিছিয়ে আছি। তাই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় সংক্রামক ব্যাধি অধ্যয়ন, নির্ণয় ও চিকিৎসা তিনটিই পদ্ধতিগতভাবে ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
সংক্রামক রোগগুলোর প্রতি সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি আমরা এসব রোগের সম্পর্কে জানতে পারবো এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবো, ততই আমরা আমাদের পরিবার এবং সমাজকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবো।
ভবিষ্যতে সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিতভাবেই নিরাপদ থাকতে পারবো। তবে, মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি রোগের ক্ষেত্রে সঠিক ও প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।
ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ : গবেষক ও অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
