ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা-প্রতিবাদ শিবিরের

ছাত্রদল ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর সাম্প্রতিক কর্মসূচিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
শনিবার (৩১ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা এক নতুন, ন্যায়ভিত্তিক ও সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সময় বদলেছে, কিন্তু কিছু দলের রাজনৈতিক চরিত্র বদলায়নি। পতিত ফ্যাসিবাদের উত্তরসূরি হিসেবে আজ নব্য ফ্যাসিবাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ছাত্রদল ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনসমূহ।
দেশব্যাপী শিক্ষার্থী নিপীড়ন, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্য, ছিনতাই, সিট দখল, অপপ্রচার, ট্যাগিং, র্যাগিং ও হামলাসহ নানাবিধ অপরাধমূলক সংস্কৃতি এখনো অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা ও কক্সবাজার পলিটেকনিক, সরকারি গ্রাফিক্স আর্টস কলেজ, কুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অপরাজনীতির উদাহরণ তৈরি করেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সারাদেশের ছাত্রসমাজের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ছাত্রদল এখন সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। আজ চট্টগ্রামের সরকারি কমার্স কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ছাত্রশিবির ‘হেল্প ডেস্ক ও অভিভাবক ছাউনিতে’ ছাত্রদল বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বাধা দিয়ে অতর্কিত হামলা করে, এতে ছাত্রশিবিরের তিনজন কর্মী আহত হন।
একইদিনে চট্টগ্রাম ইসলামিয়া কলেজ ও রংপুরেও আমাদের কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হয়। গতকাল তিতুমীর কলেজে হল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘গতকাল ইভটিজিংয়ে বাধা দেওয়ায় ফরিদপুরে বৈশাখী ইসলাম বর্ষা নামের এক কলেজছাত্রীকে নির্যাতন করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একই দিনে রাজধানীর আদাবর থানায় মামলার বাদী এক নারীকে ‘জিন্দেগি বরবাদ করে দিমু’— বলে থানার ভেতরে হুমকি দেয় বিএনপির আর এক নেতা।
এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর ও বরিশালে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক কাজে ছাত্রদলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগেও যে সব কথিত নারীবাদীরা ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে, তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদলের এ ধরনের গুরুতর অপরাধে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। এটা প্রমাণ করে, তাদের মানবাধিকারের সংজ্ঞায়ন ও নারীবাদী চেতনা এক চোখা ও নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ।’
শিবির নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের দলীয় প্রোগ্রামে অংশগ্রহণে বাধ্য করতো। কিন্তু গতকাল (৩০ মে) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় দুই নারী শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার হুমকি দেয় ছাত্রদল।
আরও পড়ুন
একদিকে নিজেরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে অন্যদিকে তাদের অপরাধ ঢাকতে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোকে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি ছাত্রদল ও বামজোটের ট্যাগিং ও দায় চাপানোর রাজনীতিও চলছে পুরোনো কায়দায়। শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে তার বৈধতা প্রমাণে ছাত্রশিবিরের ওপর বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে তারা।
এছাড়াও প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে সহিংস রাজনীতির পথে হাঁটছে ছাত্রদল ও বামজোট। ‘শিবির মারা জায়েজ ছিল, জায়েজ আছে, জায়েজ থাকবে। এদের বেসিক হিউম্যান রাইটস থাকাও উচিত কিনা এটা নিয়ে ডিবেট হওয়া উচিত’- লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় ছাত্রদল নেতা আহনাফ তাহমিদ অর্জন। অপরদিকে লাশের রাজনীতির বৈধতার বয়ান উৎপাদন করতে গিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শাহরিয়ার ইব্রাহিম আবরার ফাহাদের হত্যা জায়েজ ছিল বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আমরা ছাত্রদল ও বামজোটের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং বিগত ফ্যাসিস্টদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে এহেন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত হয়ে ছাত্রবান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা করার পরামর্শ দিচ্ছি। অন্যথায় ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে ৩৬ জুলাই স্পিরিটের আলোকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবো। পাশাপাশি বাকশাল ও ফ্যাসিবাদের সহযোগী লাল সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’
জেইউ/এসআইআর