নূর চৌধুরীকে নিয়ে কানাডার সিবিসি নিউজের প্রতিবেদন ও আমার ভাবনা

সম্প্রতি সিবিসি নিউজের সাংবাদিক মার্ক কেলি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নূর চৌধুরী– যিনি কানাডায় মুক্তভাবে বসবাস করছেন, তার একটি সচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তার প্রতিবেদনে উঠে আসে এই ঘাতককে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন চেষ্টা চালায়। তারা কানাডার উচ্চ মহলে যোগাযোগ করলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, কানাডার গোপনীয়তা আইনের কারণে, অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্বের কারণে কানাডা জড়িতদের সম্মতি ছাড়া কোনো ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মন্তব্য করতে পারে না। কানাডা সরকার এই মুহূর্তে আর কোনো মন্তব্য করবে না।
মার্ক কেরি বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ও কানাডার আইনজীবীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তার প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেন।
নূর চৌধুরীর নির্দোষ দাবির সমর্থনে সাক্ষী আবেদনকারীর পক্ষে সাক্ষ্য দেন। কিন্তু ২০০২ সালে অভিবাসন ও শরণার্থী বোর্ড রায় দেয়। নূর চৌধুরী ন্যায়বিচার থেকে পলাতক, তার আলিবিকে ‘সিম্পলি অকল্পনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন। ২০০৩ সালে কানাডার ফেডারেল আদালত মামলাটি দ্বিতীয়বার দেখতে অস্বীকার করে এই বলে যে আইআরবি প্যানেল ‘কোনো পর্যালোচনাযোগ্য ত্রুটি করেনি।’
হারপার সরকারের আমলে জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হ্যাঁ আমি দৃঢ়ভাবে ফাইলটি দেখেছি, তিনি এখানে (কানাডা) থাকবেন না। তারপর আরবি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নূর চৌধুরীকে ডিপোর্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কানাডার সুপ্রিম কোর্ট আগেই সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, যাদের জীবন নিজ দেশে বিপন্ন তাদের সেই দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না। সে কারণে নূর চৌধুরী বিগত প্রায় ৩০ বছর কানাডায় বসবাস করছেন।
আইনজীবী বারবারা জ্যাকম্যান বলেছেন, তিনি কানাডায় থাকতে পারবেন– এমন সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অর্থাৎ আপনি কাউকে মৃত্যু বা নির্যাতনের মুখে ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। তিনি আরও বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের প্রেক্ষাপটে তারা কখনোই সিদ্ধান্ত নেয়নি যে কী একটি ব্যতিক্রম পরিস্থিতি ছিল। কানাডার সুপ্রিম কোর্ট সর্বদা ব্যতিক্রম পরিস্থিতিকে যুদ্ধের অবস্থা বা জাতীয় জরুরি অবস্থা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ল এক্সপার্ট রব কুরি সম্মত হন যে বল কানাডার কোর্টে আছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি কানাডায় নূর থাকায় আমরা অস্বস্তিকর অবস্থায় আছি। আরও আইনি প্রক্রিয়া এবং কূটনৈতিক স্তরের প্রক্রিয়া রয়েছে, যা অনুসরণ করা যেতে পারে। কিন্তু কেন সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না তা আমার কাছে রহস্য। কুরি কানাডা এবং কানাডিয়ানদের জন্য এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
মার্ক বলেছেন, কিন্তু দিন শেষে কানাডা কি একজন ঘাতককে আশ্রয় দিচ্ছে? নাকি মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে? আর আমরা মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করার কথা বলে নৈতিকতাকেই স্থান দিয়েছি? আমাদের বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত, যাতে আমরা এখান থেকে বেরিয়ে এসে তাকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারি। সম্পূর্ণ বিষয়টি আবার উত্থাপিত হবে বলে আমাদের ধারণা।
লেখক : ক্যালগেরি, কানাডা