(রোববার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪)
আজকের হাদিস
আরও হাদিস পড়ুন...রমজানের প্রধান মূল দুটি আমল হচ্ছে, দিনের বেলায় রোজা রাখা এবং রাতের বেলায় কিয়াম তথা ২০ রাকাত তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৭)
রমজানের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) চমৎকার বলেছেন, আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে গোটা বছরের জন্য ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা এতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)
আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহে এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদের করা হয় শৃঙ্খলাবদ্ধ। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রমজান আরম্ভ হলে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৯)
রমজানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা তার নিজ অনুগ্রহে এই মাসে অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন রমজান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে—হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮৭৯৪)
রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা এবং সাদকাহ করা। কারণ আমাদের প্রিয় নবীজি এই মাসে এ দুটি কাজ খুব বেশি বেশি করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে দেখা করতেন এবং তাঁরা একে অন্যকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রোজা ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি রোজা পালন করছি। ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ— অবশ্যই রোজা পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)
সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৮)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শৃংখলিত করে দেয়া হয় শয়তানকে। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৯)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম রোজা পালন করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার বন্ধ করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯০০)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যাক্তি লাইলাতুল ক্বদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তার পিছনের সমস্ত গুনাহ মাপ করা হবে। আর যে ব্যাক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করবে, তারও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯০১)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যাক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রোজা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা আমার জন্য, তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। রোজা ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার কবজায় মুহাম্মদের প্রাণ, তার শপথ! সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহ্র নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সায়ইমের জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওম বিনিময়ে আনন্দিত হবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)
সাহল ইবনু সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে সেহরি খেতাম। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে সালাতে শরিক হওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করতাম। (বুখারি, হাদিস : ১৯২০
আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা সেহরি খাও, কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ১৯২৩)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা.) বলেছেন, রোযাদার ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার রোজা পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৯৩৩)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি মারফু হাদিস বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ওযর এবং রোগ ব্যতীত রমযানের একটি সাওম ভেঙ্গে ফেলল, তার সারা জীবনের সাওমের দ্বারাও এ কাযা আদায় হবে না, যদিও সে সারা জীবন সাওম পালন করে। (বুখারি, হাদিস : ১৯৩৫
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, হামযা ইবনু আমর আসলামি (রা.) অধিক সাওম রোজা পালনে অভ্যস্থ ছিলেন। তিনি নবী (সা.) কে বললেন, আমি সফরেও কি সাওম রোজা পালন করতে পারি? তিনি বললেন, ইচ্ছা করলে তুমি সাওম পালন করতে পার, আবার ইচ্ছা করলে নাও করতে পার। (বুখারি, হাদিস : ১৯৪৩)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যাক্তিকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এর কী হয়েছে? লোকেরা বলল, সে রোজাদার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সফরে সাওম পালনে কোন নেকী নেই। (বুখারি, হাদিস : ১৯৪৬)
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রোজার কাযা জিম্মায় রেখে যদি কোনো ব্যাক্তি মারা যায়— তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে সাওম আদায় করবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫২)
সাহল ইবনু সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৭)
আজকের দোয়া
আরও দোয়া পড়ুন...ইফতারের সময় যে দোয়া পড়বেন
ইফতারের সময় যে দোয়া পড়তে হয়— সে সম্পর্কে হাদিসে বর্ণনা এসেছে। ইফতারের পরের দোয়ার কথাও উল্লেখ হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন-
ইফতারের দোয়া আরবি : ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ : জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু; ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।
অর্থ : (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৭)
ইফতারের করার সময় যে দোয়া পড়বেন
আরবি : بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিজের মাধ্যমে ইফতার করেছি। (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)
যে দোয়া পড়লে নিরাপদ থাকবেন
আরবি : بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিজের মাধ্যমে ইফতার করেছি। (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)
যে দোয়া পড়লে নিরাপদ থাকবেন
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিভিন্ন দোয়ার মধ্যে এই দোয়া অন্যতম। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৪৫)
আরবি : اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাওয়ালি নি‘মাতিকা, ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিকা, ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা, ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আপনার নিয়ামতে বিলুপ্তি, আপনার অনুকম্পার পরিবর্তন, আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সব ক্রোধ থেকে।
নবীজি যে দোয়া বেশি পড়তেন
বিশিষ্ট তাবেয়ি কাতাদাহ (রহ.) সাহাবি আনাসকে (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, নবী করিম(সা.) কোন দোয়া বেশি করতেন? উত্তরে সাহাবি আনাস (রা.) নিম্নোক্ত দোয়ার কথা জানালেন। তাই আনাস (রা.) নিজে যখনই দোয়া করতেন- তখনই দোয়াতে এই আয়াত প্রার্থনারূপে পাঠ করতেন। এমনকি কেউ তার কাছে দোয়া চাইলে— তিনি তাকে এ দোয়া দিতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭০১৬)
দোয়াটি হলো : رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ্, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ্। ওয়াকিনা আজাবান্নার।
অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাদের দুনিয়াতে সুখ-কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও সুখ-সমৃদ্ধি দান করুন এবং জাহান্নাম থেকে আমাদের রক্ষা করুন। (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ২০১)
এ দোয়াকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়ে থাকে। নবী করিম (সা.) এ দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পাঠ করতেন।
বেশি সওয়াব লাভের দোয়া
এক হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ১০০ বার এই দোয়া পড়বে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে বেশি নেকি নিয়ে কেউ আল্লাহর দরবারে হাজির হতে পারবে না। তবে যারা এই দোয়ার আমল করে, তারা ছাড়া। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯২)
দোয়াটি হলো— سبحان الله وبحمده
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি।
অর্থ : আল্লাহ পবিত্র এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। কোনো কোনো আলেম দোয়াটির অর্থ এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি।
বৈঠক শেষে যে দোয়া পড়বেন
মানুষের জীবনের সঙ্গে বসা, বৈঠক করা, আলাপ-আলোচনায় অংশ নেওয়া ও গল্প করা ইত্যাদি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ, এগুলো ছাড়া বলতে গেলে মানুষের জীবন চলেই না। কিন্তু এসবে অনেক সময় আল্লাহর অপছন্দনীয় ও গুনাহের কাজ-কর্ম এবং কথাবার্তা হয়ে যায়।
মানুষের বৈঠক ও আলোচনা-আলাপও যেন পুণ্যময় হয় এবং গুনাহ হয়ে গেলে তা যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়— সে জন্য আল্লাহর রাসুল একটি দোয়া শিখিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বৈঠক শেষে যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে— আল্লাহ বৈঠকে করা তার ভুলত্রুটি ও গুনাহ ক্ষমা করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৩৩)
আরবি : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وبَحَمْدكَ أشْهدُ أنْ لا إلهَ إلا أنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وأتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার কাছে তাওবা করছি।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার দোয়া
দোয়াটি হলো (আরবি) : َاللّهمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِيْ اللَّهمَّ عَافِنِيْ فِي سَمْعِيْ اللَّهمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي لَا إلهَ إلَّا أنْت
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি সাম-ই, আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি বাসারি, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নাই।
সম্পদ-বরকত লাভের দোয়া
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, একদা আইয়ুব (আ.) নগ্ন শরীরে গোসল করছিলেন। এমন সময় তার ওপর স্বর্ণের একঝাঁক পঙ্গপাল পতিত হলো। তিনি সেগুলো দুই হাতে ধরে কাপড়ে রাখতে লাগলেন। তখন তার রব তাকে ডেকে বললেন, হে আইয়ুব, তুমি যা দেখতে পাচ্ছ, তা থেকে কি আমি তোমাকে অমুখাপেক্ষী করে দিইনি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, হে রব! কিন্তু আমি আপনার বরকত থেকে মুখাপেক্ষীহীন নই। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯১)
দোয়াটির আরবি : لا غِنَى بي عن بَرَكَتِكَ
উচ্চারণ : ইয়া রব্বি, লা-গিনান বি- আন-বারাকাতিক।
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনার বরকত থেকে আমি অমুখাপেক্ষী নই।
মানসিক অস্থিরতা দূর করার দোয়া
দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা মানুষের জীবন অসহ্য করে তোলে। কুরে কুরে খায় তার সময় ও সবকিছু। তাই মানসিক অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে বেশ কিছু দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। সেগুলোও পড়লে আল্লাহ তাআলা অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন।
দোয়াটি হলো (আরবি) :
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ العَجزِ وَالكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الجُبنِ وَالبُخلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ غَلَبَةِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া কহরির রিজাল।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল থেকে।
হারানো জিনিস খুঁজে পাওয়ার দোয়া
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কারো কোনো কিছু হারিয়ে গেলে সে যেন অজু করার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং তাশাহুদ পড়ার পর নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করে—
بسم الله يا هادي الضلال وراد الضالة اردد علي ضالتي بعزتك وسلطانك فإنها من عطائك وفضلك
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ইয়া হাদিয়াদ দ্বালাল, ওয়া রা-দ্দাদ দ্বাল্লাহ; উরদুদ আলাইয়া দ্বাল্লাতি, বিইজ্জাতিক ওয়া সুলতানিকা; ফাইন্নাহা মিন আত্বায়িকা ও ফাদ্বলিক।
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু। হে হারানো জিনিসের সন্ধানদাতা, হারানো বস্তু প্রত্যাবর্তনকারী; আপনার সম্মান ও ক্ষমতার উসিলা দিয়ে প্রার্থনা করছি, আপনি আমাকে আমার হারানো জিনিসটি ফিরিয়ে দিন। এটি আপনার দান এবং অনুগ্রহ।’
চোখ-কান ভালো রাখার দোয়া
দোয়াটির আরবি হলো : اللهمَّ مَتِّعْنِي بِسَمْعِي وبَصَرِي، واجعلْهُما الوَارِثَ مِنِّي، وانْصُرْنِي على مَنْ ظَلَمَنِي، وخُذْ مِنْهُ بِثَأْرِي
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা মাত্তি‘নি বিসাময়ি ওয়া বাসারি, ওয়াজআলহুমা আল-ওয়ারিসা মিন্নি, ওয়াংসুরনি আলা মান জালামানি, ওয়া খুজ মিনহু বিছা-রি।
অর্থ : হে আল্লাহ, তুমি আমাকে আমার চোখ ও কানের দ্বারা উপকৃত করো এবং এগুলোকে আমার মৃত্যু পর্যন্ত সুস্থ রাখো, যে আমার ওপর জুলুম করে তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো এবং তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে আমাকে দেখাও। (আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ৬৫৪)