উহুদ ও খন্দক যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন যে নারী সাহাবি

রাসূল সা.-এর ফুফু ছিলেন হজরত সাফিয়্যা রা.। তিনি ও সায়্যিদুশ শুহাদা হজরত হামজা রা. একই মায়ের সন্তান ছিলেন। তিনি আশারায়ে মুবাশশারার অন্যতম সদস্য হজরত যুবাইর ইবনুল আওয়ামের মা ছিলেন। মুসলমানরা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত শুরু করলে তিনি স্বামী আওয়ামের সঙ্গে হিজরত করেন।
হজরত সাফিয়্যা রা. কয়েকটি জিহাদে অংশ করেন। উহুদ ও খন্দক যুদ্ধে তিনি সাহস ও দৃঢ়তার বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
খন্দক যুদ্ধের সময় মুসলিম নারীদের নিরাপত্তার জন্য কবি হাসসান বিন সাবিতের তত্ত্ববধায়নে রেখে যান রাসূল সা.। তাদের একটি দুর্গে রেখে যাওয়া হয়। দুর্গটির নাম ছিল ফারে বা উতুম দুর্গ।
দুর্গে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া নারীদের মধ্যে রাসূল সা.-এর ফুফু সাফিয়্যা রা.ও ছিলেন। একদিন তিনি খেয়াল করলেন, এক ইহুদি দুর্গের আশপাশে ঘুরঘুর করছে। তিনি আশঙ্কা করলেন, সে হয়তো মুসলিম নারীদের অবস্থানের কথা জেনে অন্যদের কাছে গিয়ে বলে দিবে। এতে মুসলমানদের ওপর বিপদ নেমে আসতে পারে। কারণ, রাসূল সা. তখন পুরুষদের নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন
তিনি আসন্ন বিপদের শঙ্কার কথা জানালেন হাসসান রা.-কে। বললেন, এই ইহুদিকে হত্যা করো। তা না হলে সে আমাদের অবস্থানের কথা অন্য ইহুদিদের বলে দিবে।
হাসসান রা. বললেন, আপনার জানা আছে, আমার কাছে এর কোনো প্রতিকার নেই। আমার মধ্যে সেই সাহস থাকলে আমি রাসূল সা.-এর সঙ্গে মাঠে থাকতাম।
সাফিয়্যা রা. তখন নিজেই তাঁবুর একটি খুঁটি হাতে নিয়ে ইহুদির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করলেন। এরপর তার মাথা নিয়ে ইহুদিদের দুর্গের সামনে ছুঁড়ে মারলেন। এই দৃশ্য দেখে বাকি ইহুদিরা আতঙ্কিত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল।
পরবর্তীকালে সাফিয়্যা রা. বলতেন— আমিই প্রথম নারী যে একজন পুরুষকে হত্যা করেছে।
উহুদ যুদ্ধেও তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন। এই যুদ্ধের এক পর্যায়ে কুরাইশ বাহিনীর আক্রোমণে যখন মুসলমানরা বিক্ষিপ্ত হয়ে পালাতে শুরু করেন, তখন সাফিয়্যা রণক্ষেত্র থেকে পলায়নপর সৈনিকদের যাকে সামনেপাচ্ছিলেন তাকে পিটাচ্ছিলেন এবং উত্তেজিত কণ্ঠে বলছিলেন, তোমরা রাসূল সা.-কে ফেলে পালাচ্ছো?
এই যুদ্ধে তার ভাই সায়্যিদুশ শুহাদা হজরত হামজা রা.-কে নির্মমভাবে শহীদ করে কুরাইশরা। তাই সাফিয়্যার ছেলে যুবাইরকে রাসূল সা. জানিয়ে দেন, তোমার মা যেন কোনোভাবে হামজার লাশ না দেখেন, তিনি তা সহ্য করতে করতে পারবেন না। যুবায়ের মাকে একথা জানানোর পর তিনি বলেন, আমি শুনেছি আমার ভাইয়ের লাশ বিকৃত করা হয়েছে। তবুও আমি ধৈর্য ধারণ করবো, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবো। এরপর তাকে ভাইয়ের লাশের কাছে নিয়ে গেলে তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং মুখে ইন্না লিল্লাহ উচ্চারণ করে তার মাগফিরাত কামনা করেন।
হজরত সাফিয়্যা রা. ওমর রা.-এর খেলাফতকালে ২০ হিজরিতে ৭৩ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাকে বাকী গোরস্তানে মুগীরা ইবনে শুবার আঙ্গিনায় অজুখানার পাশে দাফন করা হয়।
(আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, ৬/৮৬)
