এথেন্সে মুসলিম শাসনামলে গড়ে ওঠা ৩ মসজিদ ও মাদরাসা

আধুনিক গ্রীসের রাজধানী এথেন্স এক সময় মুসলিম শাসনের অধীনে ছিল। ১৪৫৮ সাল থেকে ১৮২১ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলটি ছিল উসমানিদের অধীনে।
১৯শ ও ২০শ শতাব্দীর গোড়ার দিকের উসমানিদের বিরুদ্ধে গ্রিকদের দীর্ঘ ও রক্তাক্ত সংগ্রামের পর অঞ্চলটি উসমানীয়দের হাত ছাড়া হয়। এরপর সেখানে গড়ে উঠা উসমানীয় স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব স্থাপনা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উসমানি-গ্রিক ইতিহাসবিদ দিমিত্রিস লুপিস বলেন, ১৯৯০-এর দশক থেকে গ্রিসের রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন যুগের স্থাপত্য সংরক্ষণে জোর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্রিসের উত্তরাঞ্চলে অনেক উসমানি স্থাপনা এখনও টিকে আছে। সরকার ধীরে ধীরে এসব বেসরকারি মালিকানাধীন স্থাপনা কিনে নিচ্ছে।
এথেন্স শহরে অবস্থিত উসমানি যুগের স্মৃতিচিহ্নগুলো শহরের সঙ্গে ইসলামী ও উসমানি ইতিহাসের সম্পর্কের প্রমাণ বহন করে। গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে উসমানীয় আমলের গড়ে ওঠা তিনটি মসজিদ ও মাদরাসাসহ পাঁচটি উসমানীয় নিদর্শন তুলে ধরা হলো—
১. তজিস্তারাকিস মসজিদ

১৭৫৯ সালে তৎকালীন উসমানি গভর্নর মুস্তফা আগা তজিস্তারাকিস এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মনাস্তিরাকি স্কয়ারে অবস্থিত এই মসজিদটি এখনো পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
এই মসজিদ নির্মাণে তিনি একটি প্রাচীন গ্রিক মন্দিরের স্তম্ভ ব্যবহার করেছিলেন।
১৮২১ সালের গ্রিক স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মসজিদটি সামরিক ব্যারাক, গুদামঘর, এমনকি কারাগার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এর মিনার ১৮৩৯-৪৩ সালের মধ্যে ধ্বংস হয়।
এক সময় রাজা সাঊদের জন্য নামাজের স্থান হিসেবেও এটি খোলা হয়েছিল। বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর।
আরও পড়ুন
২. পুরাতন মাদ্রাসা গেট

১৭২১ সালে নির্মিত এই ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্রটি একসময় এথেন্সের মুসলিম নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ মিলনস্থল ছিল। ১৮২১ সালে গ্রিক বিদ্রোহে এটি ধ্বংস হয় এবং পরে তা পুনর্নির্মাণ করে কারাগারে রূপান্তর করা হয়। কারাগারে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্তদের এই মাদ্রাসার উঠানের একটি গাছে ঝুলিয়ে হত্যা করা হতো।
বর্তমানে শুধু মাদরাসা গেটটি টিকে আছে—একটি পাথরের আর্চওয়ে এবং কাঠের দরজা।
৩. ফাতেহি মসজিদ

এথেন্সের প্রাচীন আগোরা এলাকায় অবস্থিত এই মসজিদটি ফাতেহি বা ‘বিজয়ের মসজিদ’ নামে পরিচিত। এটি একটি পুরনো গির্জার স্থানে নির্মিত হয়।
ভেনিসীয়রা এক সময় এটি গির্জায় পরিণত করলেও, পুনরায় মসজিদে রূপান্তর হয়। গ্রীস স্বাধীন হওয়ার পর এটি স্কুল, ব্যারাক, জেলখানা এবং সামরিক বেকারি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
২০১০ সালে গ্রিক সরকার এটি সংস্কার শুরু করে, ২০১৭ সাল থেকে এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।
৪. বাত-হাউস অফ দ্য উইন্ডস (হাম্মাম)

উসমানি আমলে নির্মিত এই ঐতিহাসিক গোসলখানা এথেন্সে একমাত্র অবশিষ্ট হাম্মাম। এটি কখন নির্মিত হয়েছিল, তা জানা যায়নি। পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা সময়ে ব্যবহারযোগ্য হাম্মামটি ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।
পরে এটি সংস্কার করে আধুনিক গ্রিক সংস্কৃতি জাদুঘরের অধীনে প্রদর্শনীর জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়।
৫. ভেনিজেলোস ম্যানশন

১৫০০ দশকের গোড়ার দিকে নির্মিত এথেন্সের সবচেয়ে পুরনো বাড়ি বলে ধরা হয় এটিকে।
দ্বিতল এই বাড়িতে একটি উঠান, কূপ ও ফোয়ারা আছে—যা উসমানি যুগের ঘরবাড়ির সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
এর নির্মাতা অ্যাঞ্জেলোস ভেনিজেলোসের কন্যা, ফিলোথেই (একজন গ্রীক অর্থোডক্স সাধ্বী ও শহীদ) এখানে থাকতেন।
১৯৭২ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এটি অধিগ্রহণ করে এবং ১৯৯৯ সালে এটি অ্যাথেন্স আর্চডায়োসিসকে হস্তান্তর করা হয়।
২০১৭ সাল থেকে এটি একটি ব্যক্তিগত জাদুঘর হিসেবে চালু হয়।
এই সব নিদর্শন শুধু ইতিহাস নয়, বরং গ্রিস ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যকার গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্কের জীবন্ত সাক্ষ্য।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই
