অপটিকসের জনক যে মুসলিম মনীষী

ইসলামী স্বর্ণযুগের মেধাবী গণিতবিদ ছিলেন ইবনুল হায়সাম। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন একজন পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ। ইতিহাসে তিনি ‘অপটিকসের জনক’ (দৃষ্টিবিজ্ঞান) হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। কারণ তিনি আলো, দৃষ্টিশক্তি ও দৃষ্টিবোধ সম্পর্কে যুগান্তকারী তত্ত্ব উপস্থাপন করেছিলেন।
তিনিই প্রথম বলেছিলেন, দৃষ্টিশক্তি সৃষ্টি হয় তখন, যখন আলো কোনো বস্তুর ওপর পড়ে তা প্রতিফলিত হয়ে চোখে প্রবেশ করে। এটি গ্রিকদের ‘চোখ থেকে আলো বের হয়’ তত্ত্বের এক বিপ্লবী বিকল্প।
ইবনুল হায়সাম একটি প্রাথমিক ‘বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির’ প্রচলন করেছিলেন, যার ভিত্তি ছিল পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা এবং যাচাই। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ‘যেকোনো বৈজ্ঞানিক দাবিকে পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করতে হবে এবং তা গণিত দ্বারা যুক্তিসংগত হতে হবে।’ এই দৃষ্টিভঙ্গি ইউরোপীয় রেনেসাঁর বহু আগে বিজ্ঞানচর্চার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
২০১৩ সালের ১ জুলাই তার ১০৪৮ তম জন্মবার্ষিকীতে গুগলের ডুডলের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করা হয়।
আরও পড়ুন
তার প্রধান রচনা
তার সর্বাধিক পরিচিত গ্রন্থ ‘কিতাব আল-মানাযির’ (Book of Optics), তিনি ১০১১ থেকে ১০২১ সালের মধ্যে কায়রোতে বসে রচনা করেন। এই বইটি ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হওয়ার পর ইউরোপে ব্যাপক প্রভাব ফেলে—বিশেষ করে ‘রজার বেকন, কেপলার এবং লিওনার্দো দা ভিঞ্চি’-র মতো জ্ঞানীগণ এতে প্রভাবিত হন।
জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র
ইবনুল হাইথাম শুধুই বিজ্ঞানী নন, তিনি ‘দর্শন, চিকিৎসা, প্রকৌশল, ধর্মতত্ত্ব এবং জ্যোতির্বিদ্যা’ নিয়েও লিখেছেন। তার মোট রচনার সংখ্যা ২০০টিরও বেশি, যেগুলো ইসলামি ও ইউরোপীয় উভয় সভ্যতাতেই অধ্যয়নের বিষয়বস্তু ছিল।
একটি বিখ্যাত উক্তি
`যদি কোনো বৈজ্ঞানিক সত্য অনুসন্ধান করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই তার পড়া প্রতিটি জিনিসের বিরোধিতা করতেই হবে' — ইবনুল হায়সাম
বিশ্বজনীন অবদান
ইবনুল হায়সামের জন্ম বাসরায় (বর্তমান ইরাক)। তার জীবনের অধিকাংশ সময় কায়রোতে কেটেছে, যেখানে তিনি লেখালেখি ও শিক্ষাদান করতেন। ইউরোপে তাকে ‘দ্বিতীয় পটলেমি’ এবং ‘দ্য ফিজিসিস্ট’ নামে অভিহিত করা হতো।
ইবনুল হায়সামের জীবন ও কর্ম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বিজ্ঞান এবং জ্ঞানচর্চা কোনো একক জাতি, ধর্ম বা সংস্কৃতির নয়—এটি মানবজাতির সম্মিলিত অগ্রযাত্রার ফল। তার অবদান আজও পৃথিবীজুড়ে আলো ছড়াচ্ছে।
সূত্র : মুসলিম হেরিটেজ