যে ৫ সুরার শুরুতে তাসবিহের মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে

পবিত্র কোরআনের পাঁচটি সুরার শুরুতে তাসবিহের মাধ্যমে একইভঙ্গিমা ও ভাষায় মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা হয়েছে। সবগুলো সুরার শুরুতে বলা হয়েছে, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাসবিহের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করে।
এই সুরাগুলোর শুরুতে سبح (সাব্বাহা) অথবা يسبح (ইউসাব্বিহু) ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছে। হাদিসে এগুলোকে مسبحات (মুসাব্বাহাত) তথা তসবীহযুক্ত সুরা বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। এই সুরাগুলো হলো— সুরা হাদীদ, সুরা হাশর, সুরা সফ, সুরা জুমআ এবং সুরা তাগাবুন।
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ আবু দাউদ, তিরমিজি ও নাসায়ীর রেওয়ায়েতে হজরত ইরবায ইবনে সারিয়া (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এসব সুরা পাঠ করতেন। তিনি আরও বলেছেন যে, এসব সুরায় একটি আয়াত এমন আছে, যা হাজার আয়াত থেকে শ্রেষ্ঠ। ইবনে কাসীর বলেন সেই শ্রেষ্ঠ আয়াতটি হচ্ছে সুরা হাদীদের এই আয়াত—
هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
এই পাঁচটি সূরার মধ্য থেকে তিনটিতে অর্থাৎ হাদীদ, হাশর ও সফে سَبَّحَ (সাব্বাহ) অতীত পদবাচ্য-সহ এবং জুমআ ও ভাগাবুনে يُسَبِّحُ (ইউসাব্বিহু) ভবিষ্যত পদবাচ্য সহকারে বলা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত থাকতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালার তসবিহ ও জিকির অতীত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান সবসময় অব্যাহত থাকা জরুরি। (মাযহারী)
সুরাগুলোর শুরুতে যেভাবে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে
সুরা হাদীদ
سَبَّحَ لِلّٰہِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ۚ وَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে, তা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা হাদীদ, আয়াত : ০১)
সুরা হাশর
سَبَّحَ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ۚ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে, তা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা হাশর, আয়াত : ০১)
সুরা সফ
سَبَّحَ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ۚ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে, তা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা সফ, আয়াত : ০১)
সুরা জুমআ
یُسَبِّحُ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ الۡمَلِكِ الۡقُدُّوۡسِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَكِیۡمِ
আসমানসমূহে এবং জমিনে যা আছে সবই পবিত্রতা ঘোষণা করে আল্লাহর। যিনি বাদশাহ, মহাপবিত্র, মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা জুমআ, আয়াত : ০১)
সুরা তাগাবুন
یُسَبِّحُ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ الۡمَلِكِ الۡقُدُّوۡسِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَكِیۡمِ
আসমানসমূহে এবং জমিনে যা আছে সবই পবিত্রতা ঘোষণা করে আল্লাহর। যিনি বাদশাহ, মহাপবিত্র, মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা জুমআ, আয়াত : ০১)
এর দুই ব্যাখ্যা হতে পারে—১. পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবেই তাদের নিজ-নিজ অবস্থার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ (পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা) করে। কারণ, প্রতিটি বস্তুই এমন যে, তার সৃষ্টি ও সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণ শক্তি ও তার একত্বের প্রমাণ মেলে এবং উপলব্ধি করা যায় প্রতিটি বস্তু একান্তভাবে তারই আজ্ঞাধীন।
২. এটাও অসম্ভব নয় যে, প্রতিটি বস্তু প্রকৃত অর্থেই তাসবীহ পাঠ করে, কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারি না। কেননা আল্লাহ তায়ালা জগতের প্রতিটি জিনিস, এমনকি পাথরের ভেতরও এক রকমের অনুভূতি-শক্তি দান করেছেন। যে শক্তির মাধ্যমে সবকিছুর পক্ষেই তাসবীহ পাঠ সম্ভব।
পবিত্র কোরআনের বেশ কয়েকটি আয়াতের আলোকে এই দ্বিতীয় ব্যাখ্যাই বেশি সঠিক মনে হয়। আধুনিক বিজ্ঞানও স্বীকার করে নিয়েছে যে, পাথরের মধ্যেও এক ধরনের অনুভব শক্তি আছে।
এনটি