ডানা-গোথিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন কোচ আর নেই

বাংলাদেশের ফুটবলে বিশেষ এক অধ্যায় ডানা-গোথিয়া কাপ। ১৯৯০ সালে ইউরোপের ডেনমার্ক ও সুইডেনে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ফুটবলাররা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই ডানা-গোথিয়া কাপের কোচ মনসুর আহমেদ আর নেই। গতকাল রাজধানীর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৭৭ বছর বয়সী মনসুর। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নানা রোগ জটিলতায় ভুগছিলেন।
মনসুর আহমেদ সত্তর দশকে ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনী, ওয়ান্ডারার্সের মতো শীর্ষ ক্লাবে খেলেছেন। শীর্ষে ক্লাবে খেললেও কোচ হিসেবেই মূলত ফুটবলাঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন মনসুর। সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতি হাসানুজ্জামান খান বাবলু প্রয়াত মনসুর সম্পর্কে বলেন, ‘সে বিকেএসপির প্রথম দিককার ফুটবল কোচ। অনেক ফুটবলার তার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। বিকেএসপির কোচ থাকাবস্থায় জাতীয় দলেও কোচিং স্টাফ হিসেবে কাজ করেছে। সোনালী অতীত ক্লাবের নির্বাহী সদস্য ছিল। মানুষ হিসেবে বেশ আন্তরিক ছিল। বয়সে আমার চেয়ে বড় হলেও একই সময়ে খেলেছি আমরা।’
বিকেএসপির সাবেক শিক্ষার্থী জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাসান আল মামুন এখন জাতীয় দলের সহকারী কোচ। তার ক্যারিয়ারের পেছনে মনসুরের অবদান ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘আমিসহ বিকেএসপির আরো অনেকের বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নের বীজ স্যারের হাতেই বোনা। তিনি আমাদের সাক্ষাৎ গুরু ছিলেন। ফুটবলের মৌলিক কলা-কৌশল তার কাছ থেকেই শেখা।’
১৯৯০ সালে ইউরোপের দুই টুর্নামেন্ট ডানা-গোথিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন হাসান আল মামুন। সেই টুর্নামেন্টে সেরা হওয়ার পেছনে কোচ মনসুরের অবদান সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা তখন খুবই ছোট। ইউরোপে যাচ্ছি এই স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। স্যারই আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, ‘এখানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের মান সম্মান বৃদ্ধি করতে হবে।’
ডেনমার্কে ডানা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে হইচই পড়ে যাওয়ার দিনটি এখনো স্মরণীয় মামুনের, ‘আমরা ডেনমার্কের টুর্নামেন্টের জন্যই গিয়েছিলাম। ডেনমার্কে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সুইডেনের গোথিয়া টুর্নামেন্টের সবাই মুগ্ধ হয়ে তারা আমাদের টুর্নামেন্টে যেভাবে হোক খেলাবেই। এরপর আমরা সুইডেনের গোথেন্সবার্গ স্টেডিয়াম যাই। যেখানে পেলে এসেছিলেন। তখনও স্যার আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, ‘চ্যম্পিয়ন হতেই হবে।’ গোথিয়া কাপেও আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। ইউরোপে বাংলাদেশ সম্পর্কে সবার তেমন ধারণা ছিল না। আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশ একটি নতুন দেশ এটাও জেনেছিল অনেকে।
ডানা-গোথিয়া কাপ মূলত স্কুলভিত্তিক টুর্নামেন্ট ছিল। অ-১৪ বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সেই টুর্নামেন্টে বিকেএসপির ফুটবল দল বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করলেও অতিরিক্ত বয়সে খেলোয়াড় খেলানোর বিতর্ক ছিল প্রচুর। এখনো ফুটবল ও ক্রীড়াঙ্গনে আড্ডায় অতিরিক্ত বয়সের খেলোয়াড় খেলিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উদাহরণে ডানা-গোথিয়ার নামই আসে সবার আগে।

টুর্নামেন্টে প্রতিনিধিত্ব ও খেলোয়াড়দের বয়স নিয়ে হাসান আল মামুন বলেন, ‘ঐ টুর্নামেন্টে বিকেএসপি ফুটবল দল অংশ নিলেও আমরা মূলত বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। অনেক ক্ষেত্রেই দল হিসেবে বাংলাদেশের নামই ব্যবহৃত হয়েছে । টুর্নামেন্টটি ছিল অ-১৪। আমাদের অনেকেরই বয়স ১৪ থাকলেও তিন-চার জনের (বখতিয়ার সহ কয়েকজন) একটু বেশি ছিল।’
ডানা-গোথিয়া কাপে বাংলাদেশের ফুটবলাররা ব্রাজিল, ফ্রান্সের মতো পরাশক্তি দেশের ফুটবলারদের হারিয়েছিল বড় ব্যবধানে। অ-১৪ পর্যায়ের টুর্নামেন্টে ২ বছরের ব্যবধান অনেক পার্থক্য গড়ে দেয়। মুল বয়সের সঙ্গে অফিসিয়াল বয়সের পার্থক্য বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন প্রথম প্রকাশ পায় এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে।
ডানা-গোথিয়া কাপে বিতর্ক থাকলেও বাংলাদেশের ফুটবলে এক সাফল্য হিসেবেই ধরা হয়। সেই সাফল্যের কারিগর মনসুরের প্রয়াণে ফুটবলাঙ্গনে শোকের ছায়া। সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাবসহ আরো অনেক সংস্থা ইতোমধ্যে শোক প্রকাশ করলেও দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাফুফে এখনো কোনো বার্তা দেয়নি।
এজেড/এফআই