সাদের শাস্তি নিয়ে বাফুফের লুকোচুরি ও ‘সার্কাস’

২ মে কিংস অ্যারেনায় আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে লাল কার্ড দেখেছিলেন স্বাগতিক বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলার সাদ উদ্দিন। লাল কার্ড পাওয়ার পর তিনি খেলা শেষে ম্যাচ কমিশনারের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়ান। বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি সাদ উদ্দিনকে সেই ঘটনা পর্যালোচনা করে ৬ মাসের শাস্তি দিয়েছিল ১৪ মে’র সভায়। সেই ছয় মাসের শাস্তি পাঁচ দিন পর ঘুরে চার ম্যাচে নেমে এসেছে।
গতকাল (সোমবার) এক জরুরি সভায় সাদ উদ্দিনের শাস্তি ছয় মাসের পরিবর্তে চার ম্যাচে নামিয়ে এনেছে ডিসিপ্লিনারি কমিটি। আজ তার ক্লাব বসুন্ধরা কিংস ফেডারেশনের নতুন সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক চিঠি পেয়েছে। অথচ আজ দিন পেরিয়ে গেলেও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফেডারেশন গণমাধ্যমকে বিষয়টি অবহিত করেনি। যা সাদ উদ্দিনের ঘটনা লুকানোর–ই প্রয়াস। ডিসিপ্লিনারি কমিটির গত দুই সভার সিদ্ধান্তও গণমাধ্যমে এসেছিল অবশ্য প্রায় ৩৬-৪৮ ঘণ্টা পর।
ডিসিপ্লিনারি কমিটির কোনো সিদ্ধান্ত বা শাস্তির নির্দেশনা পরিবর্তন বা মওকুফ এতদিন আপিল কমিটির মাধ্যমে হয়েছে। এটি ফেডারেশনের একটি বিশেষ স্বাধীন কমিটি। খেলোয়াড়/ক্লাব শাস্তির বিপরীতে আবেদন করলে আপিল কমিটি সেটা পর্যালোচনা করে। সাদ উদ্দিনের ক্ষেত্রে ঘটেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা। ১৭ মে সাদ উদ্দিন তার শাস্তি পুনঃবিবেচনার জন্য ফেডারেশনের কাছে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের পরেও স্বয়ং ডিসিপ্লিনারি কমিটিই নিজেদের সিদ্ধান্ত রদবদল করেছে। এ রকম নজির বাফুফেতে সাম্প্রতিক সময়ে তো নেই-ই, অতীতে আছে কি না সন্দেহ!
ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্তই যখন গণমাধ্যমে অবহিত করে না, সেখানে ‘স্ব-উদ্যোগে’ সাজা কমানোর কারণ নিয়ে বাফুফের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া দুরাশাই বটে। এরপরও কয়েক দফা ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফুটবলাঙ্গনে গুঞ্জন– সামনে জাতীয় দলের ম্যাচ, সেখানে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার অন্যতম পছন্দের খেলোয়াড় সাদ যেন খেলতে পারেন এজন্যই হয়তো ফেডারেশনের এমন ব্যবস্থা! ২০২৩ সালে বসুন্ধরা কিংসের কয়েকজন ফুটবলার মদকাণ্ডে ক্লাব থেকে নিষেধাজ্ঞায় পেয়েছিলেন। এজন্য ফেডারেশন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ক্লাবে নিষিদ্ধ হলে সেই খেলোয়াড় জাতীয় দলেও ডাক পাবেন না। সেখানে সাদ উদ্দিন ছয় মাস বাফুফে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় খেলতে না পারার সাজা পেয়েছিল। ফলে জাতীয় দলেও খেলার সুযোগ ছিল না।
বাফুফের ২০০৮ সালের ডিসিপ্লিনারি কোডের ৪৫ অনুচ্ছেদে ম্যাচ অফিসিয়ালদের সঙ্গে বাজে আচরণের শাস্তির বর্ণনা রয়েছে। সেখানে ১ উপধারার বি’তে রয়েছে– ম্যাচ অফিসিয়ালকে লাঞ্ছিত (কনুই, ধাক্কা ও লাথি দেওয়া) করলে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা। ২ মে কিংস-আবাহনী ম্যাচ শেষে সাদ উদ্দিন ম্যাচ কমিশনার সুজিত কুমার ব্যানার্জী চন্দনের গায়ে হাত দিয়েছিলেন। সেটা ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্টেও উল্লেখ রয়েছে। যেটা স্পষ্টতই লাঞ্ছনা আইনে পড়ে ছয় মাস হয় (প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে উল্লেখ করেছিল, ম্যাচ কমিশনারকে ধাক্কা দিয়েছিলেন সাদ)। সেই সিদ্ধান্ত দিয়ে বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি পাঁচ দিন পর ওই একই উপধারার এ’তে ফেলেছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে ম্যাচ অফিসিয়ালদের সঙ্গে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ করলে চার ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা। ডিসিপ্লিনারি কমিটি নিজেরাই সাজা প্রদান করে সেটা কমানোর এখতিয়ার রয়েছে কি না সেটা যেমন প্রশ্ন, তেমনি একবার শাস্তি এক ধারায় ফেলে পরে আবার অন্য ধারায় নেওয়ার উদ্দেশ্য কী এটা আরও বড় প্রশ্ন। কোনোটারই কোনো বক্তব্য কিংবা উত্তর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
বাফুফের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাদ উদ্দিনের শাস্তি ছয় মাস থাকলেও গণমাধ্যমে ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন ছয় ম্যাচ বলছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মেজবাহ উদ্দিনের এমন মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অবশ্য ফুটবলাঙ্গন কমবেশি পরিচিত। বাফুফের পেশাদার স্টাফরা করেছেন আরও বড় ভুল। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, ‘৪৫ এ ১ এর (সি) ধারা অনুযায়ী’ সাদ ছয় মাস খেলতে পারবেন না। এটা হবে মূলত ৪৫ এ ১ এর (বি)। কারণ (সি)-তে রয়েছে ম্যাচ অফিসিয়ালকে থুতু ছিটালে এক বছর নিষেধাজ্ঞা। সংবেদনশীল বিষয়ে এমন ভুল থাকলে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
২ মে লিগের ১৩তম রাউন্ডে আবাহনীর পর কিংস আজ পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ খেলেছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়ায় এখন সাদ উদ্দিনের পক্ষে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে ২৯ মে মৌসুমের শেষ ম্যাচে খেলতে বাধা থাকার কথা নয়। ছয় মাসের শাস্তি ১৪ দিনে নেমে আসলো। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে মোহামেডানের তাওহিদ হৃদয়ের ঘটনায় বিসিবি বারবার শাস্তি বদলেছে। মাস খানেকের মধ্যে ফুটবলেও বাফুফে সাদ উদ্দিন নিয়ে অনেকটা সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাল। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গনে আইন শুধু কাগজে-কলমে। কর্মকর্তাদের ইচ্ছে-প্রভাবই যেন শেষ কথা!
এজেড/এএইচএস