২০৫ কোটি টাকা হাতছাড়া অস্ট্রেলিয়ার, ‘কাঠগড়ায়’ পিচ কিউরেটর

মাত্র ১১ দিনেই শেষ হয়েছিল চলমান অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম তিনটি টেস্ট। গতকাল (শনিবার) চতুর্থ টেস্টও শেষ হলো মাত্র দুই দিনে। ফলে চারটি টেস্টের জন্য ২০ দিন বরাদ্দ থাকলেও, সবমিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড খেলেছে ১৩ দিন। এই পরিস্থিতিতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) মাথায় হাত। সিরিজ জিতলেও এখন তাদের পুরো মনোযোগ সম্ভাব্য রাজস্ব আয়ের দিকে। বক্সিং ডে টেস্টে নাকি সিএ’র ২৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার লোকসান হয়েছে!
বাংলাদেশি মুদ্রায় মেলবোর্নে হওয়া একটি টেস্টেই অস্ট্রেলিয়ার হাতছাড়া হয়েছে ২০৪ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এ নিয়ে চলমান অ্যাশেজে চার টেস্টের দুটিই শেষ হয়েছে স্রেফ দুই দিনের মাথায়। এত দ্রুত টেস্ট ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হওয়ায় সিএ’র প্রতি যেমন আইসিসির তির তাক করে আছে, তেমনি সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানসহ সকল স্টেকহোল্ডাররাও ক্রুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে যাচ্ছে। আর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া দায় চাপছে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) পিচ কিউরেটর ম্যাথু পেজের ওপর।
সিএ’র প্রধান নির্বাহী টড গ্রিনবার্গ জানিয়েছেন, এই ম্যাচ থেকে গভর্নিং বডি আনুমানিক ১০ মিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। যা দ্রুত ম্যাচ শেষ হওয়ার প্রভাব। যদিও দুটি সূত্রের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ বলছে, বক্সিং ডে টেস্টের দুই দিনকে অন্য ম্যাচের চারদিনের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, তার মানে লোকসানের পরিমাণ ২৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার। যেখানে টিকিট বিক্রি, খাদ্য ও বিনোদনজনিত সামগ্রী এবং সম্প্রচার সংক্রান্ত বিষয় জড়িত।

বক্সিং ডে টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে আছে ইংল্যান্ড। বাকি শুধু সিডনি টেস্ট। মেলবোর্নে সর্বশেষ ম্যাচটি দেখতে দু’দিনে রেকর্ড দর্শক হাজির হয়েছিল। প্রথম দিন ছিলেন ৯৪ হাজার ১৯৯, যা অ্যাশেজের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ এবং টেস্টের ইতিহাসে একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উপস্থিতির রেকর্ড। দ্বিতীয় দিন ৯২ হাজার ৪৫ জন ক্রিকেটভক্ত গ্যালারিতে হাজির হন। কেবল তাই নয়, তৃতীয় দিনের ৯০ হাজারের বেশি বিক্রি হওয়া টিকেটের মূল্য ফেরত দিতে হয়েছে। অগ্রীম বিক্রি হয়েছিল চতুর্থ দিনের হাজার হাজার টিকেটও।
মেলবোর্নের এই পিচ নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান গ্রিনবার্গ বলেন, ‘সমর্থক হিসেবে সমর্থকরা এই ধরনের ম্যাচ দেখতে চায়। আমাদের দাবি হচ্ছে– টেস্ট ক্রিকেট আরও বেশি দিন চলুক। অল্প সময়ের টেস্ট ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ। ব্যাট এবং বলের মধ্যে আরও ভারসাম্য রাখা দরকার। প্রথমদিন বোলাররা বেশি সুবিধা পেয়েছে। তবে ব্যাটারদেরও আরও ধৈর্য নিয়ে খেলা দরকার ছিল। সব দোষ পিচের ওপর দিলে চলবে না। আর আমরা পিচের প্রস্তুতি নিয়ে কোনো কথা বলি না। পিচ নির্মাতাদের নিজের মতো পিচ তৈরি করার অনুমতি দেওয়া আছে।’
‘বাণিজ্যিকভাবে ক্রিকেট খেলার ওপর যে প্রভাব পড়ছে, তাতে পিচের দিকে নজর না দিয়ে উপায় নেই। এমন নয় যে আমরা মাঠকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নির্দেশ দেব। কিন্তু ওরা কী করছে তার দিকে নজর থাকবে। আমরা কী প্রত্যাশা করছি সেটা বুঝিয়ে দেওয়া দরকার’, আরও যোগ করেন অস্ট্রেলিয়ান এই ক্রিকেট কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, তৃতীয় দিন থেকে প্রচণ্ড গরম পড়ার শঙ্কায় এবার মেলবোর্নে ১০ মিলিমিটার ঘাস রাখা হয়েছিল। কিন্তু খেলায় পিচের আচরণ দেখে পিচ কিউরেটর পেজ নিজেও অবাক, ‘প্রথম দিনে যা হলো, একদিনে ২০ উইকেট… দিন শেষে আমি স্রেফ হতভম্ব। কখনও এরকম টেস্ট ম্যাচে সম্পৃক্ত ছিলাম না, আশা করি আর কখনও এমন কিছুতে সম্পৃক্ত থাকব না। প্রতিটি বছরের ব্যাপার আলাদা এবং ব্যবধান খুব সামান্য। তবে মনের কোণে সবসময় ভাবনা থাকে যেন লড়াইটা জমে। আমাদের চেষ্টা থাকে আকর্ষণীয় টেস্ট ক্রিকেট উপহার দেওয়ার, চার-পাঁচ দিন ধরে যেন ব্যাট-বলের লড়াইটুকু হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনোমুগ্ধকর টেস্ট ম্যাচ উপহার দিয়েছি বটে, তবে তা যথেষ্ট লম্বা হয়নি এবং সেটির দায় আমরা নিচ্ছি। এখান থেকে আমরা শিখব। সমৃদ্ধ হব এবং নিশ্চিত করব যেন পরের বছর আমরা এটা ঠিকঠাক করতে পারি।’ মেলবোর্নের উইকেটে অস্বাভাবিক বল মুভমেন্ট দেখা গেছে। একই জায়গায় পড়া কোনো বল বাউন্স কিংবা কোনোটি ভিন্ন আচরণ করায় একে ‘নরক’ বলে উল্লেখ করেন ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস। কিছুটা কঠিন বলে দাবি করেন অজি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথও। তবে ট্রাভিস হেড ও মেলবোর্ন ক্রিকেটের প্রধান কিউরেটরের ওপরই আস্থা রাখতে চান।
এএইচএস