ফেসবুকের এক পোস্টেই লাখ ডলারের স্পন্সর

গত বছর চারেক ধরেই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ২০১৯ সালে ক্যাসিনো ঝড়ের পর ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি ছিল অস্তিত্বের সংকটে। গত মৌসুমে করোনার জন্য লিগ সম্পূর্ণ না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার জন্য শাপেবরই ছিল।
চলতি মৌসুমে দলবদলের সময় আর্থিক ও সাংগঠনিক সমস্যার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। ক্লাবটির সভাপতি সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেও আশার আলো দেখছিলেন না তখন জাপানি ফুটবলার কাতোর একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা পোস্টই আলোর মুখ দেখালো মুক্তিযোদ্ধাকে।
কাতো বেশ আবেগঘন স্ট্যাটাস ও ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন,‘ মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবকে বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে আসুন। আমরা ফুটবল খেলতে চাই।’ কাতোর সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তা চোখে পড়েছিল সফটওয়্যার কোম্পানি ‘হিসাব’-এর চেয়ারম্যান জুবায়ের আহমেদের। কাতোর সেই পোস্ট দেখেই মুক্তিযোদ্ধাকে তারা পৃষ্ঠপোষকতা করতে এগিয়ে এসেছেন।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও ‘হিসাবের’ মধ্যে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর চুক্তি হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হিসাবের চেয়ারম্যান বলেন, ‘কাতোর সেই পোস্টের জন্যই আমরা এই অবস্থানে পৌঁছেছি। আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধা দলটি গৌরবের সাথেই টিকে থাকুক।’
মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এক মৌসুমের যুক্তি করেছে হিসাব। এটি একটি সফটওয়ার কোম্পানি। বাংলাদেশি জুবায়ের আহমেদ এর চেয়ারম্যান। জুবায়েরের স্ত্রী জাপানি। সেই সূত্রে জাপানেও তার অনেক যোগাযোগ। হিসাবের অফিস রয়েছে জাপানেও।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। তিনি এই চুক্তির সকল কৃতিত্ব কাতোকেই দিলেন, ‘আমাদের অধিনায়ক কাতোই সব কিছু করেছেন। তার উদ্যোগেই এই অবস্থায় পৌঁছাতে পেরেছে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব।’
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। সেই মহেন্দ্র বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে একটি ক্লাবের সংকটময় মুহূর্তে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য জাপানি কোম্পানিকে এগিয়ে আসতে হলো। যেখানে বাংলাদেশে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি রয়েছেন।
‘জাপানি কোম্পানি হলেও এটির অন্যতম উদ্যোক্তা আমাদের বাংলাদেশি। হিসাব ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে দেশিয় অনেক প্রতিষ্ঠানও থাকবে পৃষ্ঠপোষকতায়।’
এই প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বসুন্ধরা গ্রুপের কিছুটা পৃষ্ঠপোষকতা থাকবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথাও ছিল।
বাংলাদেশ তো নয়-ই বিশ্বেরও কোনো ফুটবলার ক্লাবের অস্তিত্ব সংকটের মুহূর্তে বড় ভূমিকা রাখার উদাহরণ খুবই কম বলাই যায়।যার জন্য মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে সেই কাতো এখন নির্ভার, ‘আমি এখন একটু মুক্ত। আমার সতীর্থ ফুটবলারদের মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছি এখন আমার কাছে ভালো লাগছে। আমার ডাকে হিসাব সাড়া দেয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ’
মুক্তিযোদ্ধা দলের অন্যতম ফুটবলার শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘কাতো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ফুটবল দলের ৩০ জন ফুটবলারের পরিবারকে রক্ষা করল। আমাদের পরিবার বড় অনিশ্চয়তায় ছিল।’
হিসাবের কাছ থেকে স্পন্সরশিপ পাওয়ার পরপরই গত মৌসুমের বকেয়া পরিশোধ করেছে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব। এখন চলতি মৌসুমের পারিশ্রমিক ধীরে ধীরে পরিশোধ করে দেবে তারা।
মুক্তিযোদ্ধার মালয়েশিয়ান কোচ রাজা ইসা বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশেই কোচিং করিয়েছি। কিন্তু কাতোর ভূমিকায় কাউকে দেখেনি। ক্লাবের আর্থিক দুঃচিন্তা দূর হয়েছে। এখন ফুটবলাররা সবাই মাঠে মনোযোগ দেবে। লিগে আপনারা ভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখতে পাবেন।’
এজেড/এমএইচ/এটি