‘বসুন্ধরাই’ যখন বসুন্ধরার প্রতিপক্ষ

২০১৮ সাল থেকে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর প্রিমিয়ার লিগে খেলছে বসুন্ধরা কিংস। বসুন্ধরা প্রিমিয়ার লিগে আসার পর থেকে অন্য ক্লাবগুলো দলবদলের বাজারে দেশি ও বিদেশি কোনো খেলোয়াড় সংগ্রহে সেভাবে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। আসন্ন মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের পর দ্বিতীয় সেরা দল এখন পর্যন্ত কাগজে-কলমে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড। শেখ রাসেল ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক ও পরিচালনায় বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষই। ফলে বসুন্ধরা কিংসের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বসুন্ধরাই’।
মাত্র বছর তিনেক ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে পদার্পণ হলেও বসুন্ধরা কিংস অনেক কিছুতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুনত্ব সৃষ্টি করেছে। টানা দুই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এবার তাদের হ্যাটট্রিক লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি। সেক্ষেত্রে মাঠে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে বসুন্ধরার পৃষ্ঠপোষকতারই দল শেখ রাসেল। গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেও নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল বসুন্ধরা কিংস, ‘আমাদের লক্ষ্য ষাটের দশকে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের রেকর্ড স্পর্শ করা। আমরা সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছি। মাঠের খেলায় যারা ভালো খেলবে এবং সেরাটা দিবে তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে’ জানালেন সভাপতি ইমরুল হাসান।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে স্বার্থের সংঘাত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবলাঙ্গনে সেই স্বার্থের সংঘাতের ‘কাঠগড়ায়’ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন দল বসুন্ধরা কিংস। নিজেদেরই একটি দল রয়েছে। এর পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপ লিগের শীর্ষ দুই দল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেডকে সরাসরি পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জড়িত। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত শিরোপার লড়াইয়ে ছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি লিমিটেড। আসন্ন মৌসুমে কিংসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বি হতে যাচ্ছে তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় আরেক দল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড।
দেশের ফুটবলের শীর্ষ তিন ক্লাবের সরাসরি পৃষ্ঠপোষক বসুন্ধরা। এখানে কিছুটা স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি হয়। শেখ রাসেল ও শেখ জামালে গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতা সম্পর্কে কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘আমরা ফুটবলের শীর্ষ স্তরে ২০১৮ সাল থেকে। এর অনেক আগে থেকেই শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। শেখ জামালকেও পৃষ্ঠপোষকতা করছে আগে থেকে।’
শেখ রাসেল ও শেখ জামালে পৃষ্ঠপোষকতা বসুন্ধরা গ্রুপের পুরনো হলেও প্রিমিয়ার লিগে চলমান মৌসুমে আরামবাগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, উত্তর বারিধারাকেও আর্থিক সহায়তা করেছে বসুন্ধরা। ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডানের সঙ্গে যৌথভাবে ভেন্যু নিয়েছে কুমিল্লায়। সেই ভেন্যুর প্রায় সব খরচই বসুন্ধরাই বহন করেছে।
আরামবাগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উত্তর বারিধারার মতো প্রান্তিক ক্লাবগুলোর আর্থিক সাহায্য নিয়ে কিংসের সভাপতির বক্তব্য, ‘আমরা যখন প্রিমিয়ার ফুটবলে আসি তখনই আমাদের পরিকল্পনা ছিল দেশের ফুটবলে উন্নয়ন করা। আরামবাগ, মুক্তিযোদ্ধা খুব কঠিন সময় পার করছিল। দেশের ফুটবলের স্বার্থে আমরা তাদের দুঃসময়ে পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেছি। এখানে অন্য কোনো বিষয় জড়িত নয়। প্রিমিয়ার লিগের বাইরেও আমরা জুনিয়র পর্যায়ে ক্লাবগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করি ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে।’
ঘরোয়া ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন/রানার্স আপ হওয়া এবং রেলিগেশন এড়ানোর ক্ষেত্রে সমঝোতার ম্যাচের অভিযোগ উঠে অনেক সময়। প্রিমিয়ার লিগের ১৩ দলের ৭ দলই বসুন্ধরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষক। পৃষ্ঠপোষকতা করায় ফুটবলাঙ্গনে কানাঘুষা বসুন্ধরা কিংস বিশেষ সুবিধা পায় কি?
এমন প্রশ্নে কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানের সোজা উত্তর, ‘ঘরোয়া ফুটবলে প্রথম মৌসুমেই অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব নেই কারো। আমরা শেখ রাসেলের কাছে সিলেটে হেরেই প্রথম আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি এবং বিলম্বিত হয়েছে শিরোপা জয়। গত তিন বছরে শেখ রাসেল ও শেখ জামালের বিপক্ষেই বেশি পয়েন্ট হারিয়েছি আমরা। অন্য ক্লাবগুলোর তুলনায় এই দুইটি ক্লাবের সঙ্গে আমাদের বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হয়। আমরা বিশ্বমানের বিদেশি ফুটবলার, দেশিয় সেরা ফুটবলার নিয়ে দল গড়ি। আমাদের অর্জিত প্রতিটি পয়েন্ট কষ্টার্জিত।’
এজেড/এনইউ