দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ ভারতীয় বিস্ময় বালকের

টানটান লড়াই শেষে অন্তিম মুহূর্তে গিয়ে হার মানলেন রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে বিশ্বের শীর্ষ দাবাড়ু তথা পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে গেরে গেলেন ১৮ বছর বয়সী ভারতীয় এই দাবাড়ু।
রোগা, ছিপছিপে চেহারা। কপালে তিলক আঁকা। মাথার চুল নিপাট ভদ্রভাবে আচড়ানো বিস্ময় বালক প্রজ্ঞানন্দ ভারতের কিংবদন্তি দাবাড়ু বিশ্বনাথ আনন্দের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়েছিলেন। ভারতজুড়ে লাইমলাইটে থাকা রোহিত-বিরাট কোহলিদের কথা বাদ দিলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল এই বিস্ময় বালক। স্বাভাবিকভাবেই সবার নজর ছিল ফাইনালে।
আজারবাইজানের বাকুতে আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশনের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে প্রথম দু’টি ক্লাসিক্যাল রাউন্ড ড্র হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আজ (বৃহস্পতিবার) সেখানেই হেরে গেলেন প্রজ্ঞা। প্রথম র্যাপিড রাউন্ডে একটি চাল দিতে সাড়ে ৬ মিনিট সময় নেন প্রজ্ঞা। ২৫ মিনিটের খেলায় সেই একটি চালই প্রজ্ঞাকে পিছিয়ে দেয়। প্রজ্ঞার ভুলের সুযোগ নিয়ে ২.৫-১.৫ পয়েন্টে জিতে গেলেন নরওয়ের দাবাড়ু কার্লসেন।
— International Chess Federation (@FIDE_chess) August 24, 2023
টাইব্রেকারে প্রথম র্যাপিড রাউন্ডে শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক খেলছিলেন দুই প্রতিযোগী। রাজা-কে সামলে রাখছিলেন তারা। সময়ের নিরিখেও প্রায় সমানে সমানে যাচ্ছিলেন দু’জন। স্নায়ুর যুদ্ধ চলছিল। সেই সঙ্গে ঘড়ির দিকেও নজর দিতে হচ্ছিল তাদের। মাঝে একটি চাল দিতে গিয়ে সাড়ে ৬ মিনিট সময় নেন প্রজ্ঞা।
সেখানে কিছুটা পিছিয়ে পড়েন তিনি। প্রজ্ঞার সময় কমতে থাকায় খেলায় ভুল করেন তিনি। তার রাজা অরক্ষিত হয়ে যায়। তার সুযোগ নেন কার্লসেন। একটা সময় প্রজ্ঞার সময় ১০ সেকেন্ডের নিচে নেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ ছিল না ভারতীয় দাবাড়ুর। হার স্বীকার করে নেন তিনি।
র্যাপিডের দ্বিতীয় রাউন্ডে সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলছিলেন কার্লসেন। ফলে শুরুতেই সুবিধা পান তিনি। প্রথম থেকেই সময়ের ব্যবধান বাড়তে থাকে। প্রজ্ঞার খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছিল, যথেষ্ট চাপে রয়েছেন তিনি। ফলে প্রতিটি চাল দিতে সময় নিচ্ছিলেন। কার্লসেনের হাতে সময় থাকায় তিনি ফুরফুরে মেজাজে খেলছিলেন। ২২ চালের পরে ড্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন দুই প্রতিযোগী। ফলে খেলা জিতে যান কার্লসেন।
বিশ্বনাথ আনন্দের পর ভারত সেভাবে দাবায় নিজেদের মাটি শক্ত করতে পারেনি। বিশ্বনাথ ২০০০ এবং ২০০৭ সালে দাবা বিশ্বকাপ ভারতের মাটিতে নিয়ে আসেন। এরপরও আরও তিনবার তিনি দাবা বিশ্বকাপ জিতেছেন। আনন্দের জেতা ২০১২ সাল বিশ্বকাপের পর থেকে ভারত সইভাবে এই খেলায় দাগ কাটতে পারেনি। তবে প্রজ্ঞানন্দের প্রতিভায় অবাক সবাই।
চলতি টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিশ্চিত করা ছাড়াও আগামী বছর কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য ক্যান্ডিডেটস প্রতিযোগিতায় নিজের নাম তুলে ফেলেছেন। এই ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে যোগ্যতা অর্জনকারী তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হতে চলেছেন প্রজ্ঞা। কিংবদন্তি ববি ফিশার এবং কার্লসেনের পরে তিনি তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু।
এফআই