বোরো ধানের ক্ষেত

মাঠজুড়ে বোরো ধান সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে। ধানের সবুজ গাছগুলো আর কিছুদিন পরই সোনালী রঙে রূপ নেবে। এসময় বোরো ধানের যত্নে কিছু কৌশল নিতে হবে কৃষকদের।

আলাপকালে কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বোরো ধানের আবাদে সফলতা পেতে হলে কৃষককে বেশকয়েকটি কাজ সময়মতো করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক যত্ন করতে পারলে ভালো ফলন পাবেন কৃষকেরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে (২০২০-২১) বোরো ধান আবাদের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ লাখ হেক্টর জমি। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪৩ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০৫ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ২ মেট্রিক টন।

কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, ধানের চারার বয়স ৫০ থেকে ৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি দিতে হবে। সার দেওয়ার আগে জমির আগাছা পরিষ্কার এবং পানি সরিয়ে দিতে হবে। তবে জমিতে গুটি ইউরিয়া দেওয়া থাকলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে না। মনে রাখতে হবে এসময়ে সার দেওয়ার কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধানের কাইচ থোড় থেকে শুরু করে দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এসময় ধানে পোকামাকড়ের বেশ আক্রমণ হয়ে থাকে উল্লেখ করে এ কৃষিবিদ জানান, পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে (আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করে) ধানক্ষেত বালাইমুক্ত করা যায়। এসময় ধান ক্ষেতে যেসব রোগ দেখা যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- উফরা, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগ। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যেকোনো কৃমিনাশক যেমন ফুরাডান ৫ জি বা কিউরেটর ৫ জি প্রয়োগ করতে হবে।

ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে এবং হেক্টরপ্রতি ৪০০ গ্রাম ট্রুপার বা জিল বা নেটিভ ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে দুবার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে পাতাপোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ৫ কেজি/বিঘা হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে। টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতাফড়িং দমন করতে হবে। এছাড়া, যেকোনো সমস্যা হলে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে সঠিক পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী।

একে/আরএইচ