দেশি পুঁটি

দেশি পুঁটি। নামটা সামনে এলেই খাল, বিল, জলাশয়ে সাদা রঙের রুপালি রঙয়ের ছোট মাছের ছবি ভেসে ওঠে। আগে মাছ ধরতে গেলে প্রচুর দেশি পুঁটি ধরা পড়ত। এখন ঠিক তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। নানা কারণে বিলুপ্তির পথে পুষ্টি সমৃদ্ধ সুস্বাদু এ মাছ। বর্ষায়ও সবার পছন্দের মাছটির দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে।

তবে খুব শিগগিরই স্বরূপে ফিরছে দেশি জাতের এ পুঁটি মাছ। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যাবে পুকুরে। প্রাকৃতিক জলাশয়েও অবমুক্ত করা যাবে মাছের পোনা। এমনই সব সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি কেন্দ্রের একদল মৎস্য বিজ্ঞানী।

দেশি পুঁটি মাছের কৃত্রিম উপায়ে পোনা উৎপাদনে সফলতা পাওয়ার তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট স্বাদুপানির (বিএফআরআই) কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিনা ইয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আশা করছি চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছর থেকেই চাষিরা মাছটি বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে চাষ করতে পারবেন।

গবেষণা দলের নেতৃত্বে থাকা এ মৎস্য বিজ্ঞানী বলেন, গত কয়েক বছরের পরিশ্রমে এ সফলতা ধরা দিয়েছে। জাত পুঁটি বা পুঁটি (Puntius sophore) নামের স্বাদুপানির খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ মাছটির পোনা উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে এর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে শুঁটকি উৎপাদনে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।বিএফআরআই সূত্র বলছে, এ মাছটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার ও চীনে পাওয়া যায়। এক সময় মাছটি বাংলাদেশের মিঠা পানিতে বিশেষ করে বিল, হাওড়-বাওড়, নদী-নালা, খাল-বিল, জলাভূমি ও ধানক্ষেতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। খাদ্য তালিকার মধ্যে মাছটি খুবই পছন্দের ছিল।

কিন্তু জলাশয় সংকোচন, অপরিকল্পিত বাধ নির্মাণ, কৃষিকাজে কীটনাশকের যথেচ্ছা ব্যবহার, পানি দূষণ এবং অতি আহরণ ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে মাছটির বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে যায়। এতে মাছটির উপস্থিতিও কমে যায়।

বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে বাজারে দেশি প্রজাতির এ মাছটি খুবই কম পাওয়া যায়। বাজারে দাম কম হওয়ায় সবাই সহজেই কিনতে পারতো মাছটি। এতে তাদের পুষ্টির যোগানও হতো। পাশাপাশি সুস্বাদু চ্যাপা শুটকি তৈরিতে খুবই ভালো ভূমিকা রাখবে দেশীয় প্রজাতির ছোট এ মাছ। এ শুঁটকি বিদেশে রপ্তানিরও বড় সুযোগ রয়েছে।

তিনি জানান, এসব চিন্তা থেকেই বিএফআরআই, ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্র দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় জাত পুঁটি মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে কাজ শুরু করে। দীর্ঘদিনের গবেষণায় সফলতা পান মৎস্য বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে জিনপুল সংরক্ষণে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। প্রযুক্তি প্রমিতকরণের মাধ্যমে এ বছর ব্যাপক পোনা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।

জাত পুঁটি বা পুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য
জাত পুঁটি মাছের দেহ মাঝারি চাপা ও পেছনের অংশ সরু ও রুপালি বর্ণের হয়ে থাকে। আকারে প্রায় ১৫-২০ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। কানকো পাখনার ঠিক পেছনেই পৃষ্ঠ পাখনার উপস্থিতি ও পৃষ্ঠ পাখনার নিচেই বক্ষ পাখনার অবস্থান।

দেহের উপরিভাগ উজ্জ্বল ছাই থেকে সবুজাভ ছাই বর্ণের, নিচের ভাগ সাদা। দেহে দুটি কালো ফোঁটা। একটি বড় অপরটি ছোট। ছোট ফোঁটা কানকোর পেছনে ও বড় ফোঁটা পায়ু পাখনার ওপরে থাকে। শিরদাঁড়া রেখা অসম্পূর্ণ। এ মাছ বছরে দুই বার ও বর্ষাকালে প্রজনন করে।

প্রজনন ঋতুতে পুরুষ মাছের দেহের উভয় পাশে গাড় লাল রংয়ের দাগ দেখা যায়। পুঁটি মাছ জলাশয়ের মধ্যস্তরে খাবার খেয়ে থাকে। ছোট কিংবা বড় সব ধরনের জলাশয়ে সহজেই চাষ করা যায়। অন্যান্য ছোট প্রজাতির মাছের সঙ্গে কিংবা কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গেও মিশ্রচাষ করলে ভাল উৎপাদন পাওয়া যায়।

মাছটিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও অনুপুষ্টি রয়েছে। বাজারমূল্য ও পুষ্টিমানের দিক বিবেচনায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে এ মাছের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টি যোগানের পাশাপাশি তাদের আয় বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

একে/ওএফ/এসএম