গ্রীষ্মে টমেটোর যোগান কমে যায়। এ কারণে দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ বেশি। তবে এ সময় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করা যায়। কিন্তু কয়েকটি রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে কৃষকরা এ টমেটো চাষে আগ্রহী হন না। 

এ জাতের টমেটো গাছ ঢলে পড়া রোগে আক্রান্ত হয়। তবে খুব অল্প খরচ ও সহজ উপায়ে এ রোগ প্রতিরোধের উপায় নিয়ে গবেষণা করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একদল গবেষক। 

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আর্থিক সহযোগিতায় এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন। এতে সহায়তা করেছেন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম।

ড. বেলাল হোসেন বলেন, গ্রীষ্মকালীন টমেটো গাছে ঢলে পড়া রোগ হয়। ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, নেমাটোড বা প্লান্ট কৃমি দ্বারা সাধারণত রোগটি হয়ে থাকে। গাছের বেড়ে ওঠার যে কোনো সময়ে এ রোগ হতে পারে। এটি ফসলের ক্ষতি করে। 

আক্রান্ত গাছের বয়সী পাতাগুলো নিচের দিকে বেঁকে যায় ও ঢলে পড়ে। ধীরে ধীরে পুরো গাছই নেতিয়ে পড়ে এবং মারা যায়। গাছের কাণ্ডে ও শেকড়ে বাদামি দাগ পড়ে। গাছে প্রথমে কাণ্ডের এক পাশের শাখার পাতাগুলো হলদে হয়ে আসে এবং পরে অন্যান্য অংশ হলুদ হয়ে যায়। 

রোগের সংক্রমণ বাড়লে সব পাতাই হলুদ হয়ে যায় এবং অবশেষে সম্পূর্ণ শাখাটি মারা যায়। এভাবে পুরো গাছই ধীরে ধীরে মারা যায়। উষ্ণ-আর্দ্র মাটিতে এ রোগ হয়। সাধারণত তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও আর্দ্রতা ৬০ শতাংশ এ রোগ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ। 

তিনি বলেন, আমরা যদি মাটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কমাতে পারি, তাহলে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও উদ্ভিদ কৃমি অনুকূল পরিবেশ পাবে না। মাটি শোধনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ১০ কেজি মাটির সঙ্গে আধা কেজি সরিষার খৈল ব্যবহার করা হয়। মাটি শোধনের সাত থেকে ১০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে। তাতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গাছ বড় হবে। এতে বৃদ্ধি বেশি হবে এবং নেতিয়ে পড়া রোগ কমে যাবে। এ পদ্ধতিতে মাটি শোধন করে ৭০-৮০ শতাংশ রোগ দমন করা সম্ভব। যেখানে ফলন একেবারে শূন্য হয়, সেক্ষেত্রে এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফলন পাওয়া যায়। আশার বিষয় হচ্ছে, এটি খুবই সহজলভ্য ও বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।

এ পদ্ধতি ব্যবহারে চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে ড. বেলাল বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই শীতকালে টমেটোর ভালো ফলন পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন সময়ে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকায় কৃষকরা তেমন আগ্রহী হন না। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম থাকায় দামও থাকে বেশি। তাই উৎপাদন বাড়ানো গেলে দামও কম থাকবে। এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে খুব সহজেই ছাদ বাগানে টমেটোর চাষ করা যাবে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃবিভাগে যোগাযোগ করে যে কেউ এটি সংগ্রহ করতে পারেন।

মো. আব্দুল্লাহ/আরএইচ