৫২ বছরে পা দিল দেশের ধান গবেষণার আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। এখন পর্যন্ত ব্রি ১০৮টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চালের চাহিদা মেটাতে অন্যতম অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে ধান গবেষণার এ প্রতিষ্ঠানটি।

ব্রির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে ৩৬ কিলোমিটার উত্তরে জয়দেবপুরে ১৯৭০ সালের ১ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তান ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে এর যাত্রা শুরু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর এ প্রতিষ্ঠানের নতুন নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, যা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত।

ব্রি সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির রূপকল্প হলো টেকসই, নিরাপদ ও লাভজনক ধান প্রযুক্তি উদ্ভাবন। আর মিশন হলো ধান গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সহায়তা। ক্রমহ্রাসমান সম্পদ সাপেক্ষ জলবায়ু-বান্ধব ধানের প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং গবেষণায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নয়ন করা।

এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (সংশোধনী) অ্যাক্ট, ১৯৯৬ এবং ব্রি অ্যাক্ট, ২০১৭ অনুযায়ী একটি বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। মহাপরিচালক এ বোর্ডের চেয়ারম্যান, যিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী। এ প্রতিষ্ঠানের ১৯টি গবেষণা বিভাগ, ১১টি আঞ্চলিক কার্যালয়, তিনটি সাধারণ সেবা এবং আটটি প্রশাসনিক শাখা রয়েছে। এখানে ৩০৮ জন বিজ্ঞানী/কৃষি প্রকৌশলী/ কর্মকর্তাসহ মোট জনবল রয়েছে ৭৮৬ জন। বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এমএস এবং পিএইচডিসহ উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

ব্রির কৃষি অর্থনীতি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এসএসও) মো. আব্দুর রউফ সরকার জানান, সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ গ্লোবাল গো টু থিংক ট্যাংক ইনডেক্স ২০২১ (ইউএসএ) রিপোর্ট অনুসারে, ব্রি গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি থিংক ট্যাংক হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এবং এশিয়ার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি গবেষণার একটি প্রধান অঙ্গ হচ্ছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, যা দেশের প্রধান খাদ্য ধান উৎপাদন ও জাত উন্নয়নে কাজ করছে।

ব্রি জানায়, বৈচিত্র্য অনুসারে জমি, মাটি আবহাওয়া এবং জলবায়ুর তারতম্যের ভিত্তিতে দেশের কষি অঞ্চলকে তিনটি প্রধান কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এ বৈচিত্র্য ধান উৎপাদনে ব্রির বিজ্ঞানীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। নতুন ধান জাত উদ্ভাবনের গবেষক এবং উৎপাদন অন্যান্য প্রকৌশলীরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্রি সদর দফতরে কাজ করছেন। এ কারণে দেশের কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, ফেনীর সোনাগাজী, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জে আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

এ প্রতিষ্ঠানে আধুনিক গবেষণার সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। রয়েছে গবেষণাগার, গ্রিন হাউজ, এবং পরীক্ষণ মাঠ। ব্রির রয়েছে একটি আধুনিক জার্মপ্লাজম ব্যাংক, ২০টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার, ১০টি গ্রিন হাউজ, ১০টি নেট হাউজ এবং ৭৬.৮৩ একর পরীক্ষণ মাঠ (সদর দফতরে)। এছাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে আধুনিক গবেষণা সুবিধা, বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে নতুন প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্র সিরাজগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জ।

একে/এসকেডি