কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ, জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেড। দেশের ঐতিহ্যবাহী ও শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ইসলাম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের ফসলের জাত উন্নয়নে গবেষণা করছে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর ছাড়াও তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করেছে ইসলাম গ্রুপ।

আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেড জানায়, বর্তমানে ৮টি ফসল নিয়ে গবেষণা করছে তারা। এরমধ্যে ধান ও পেঁপে অন্যতম। তারা ৮০ প্রজাতির ধান ও ১৫৬ প্রজাতির পেঁপে নিয়ে গবেষণা করছে। আর এসব জাত উন্নয়নের জন্য ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইআরআরআই), বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চীনা গবেষণা ভিত্তিক কোম্পানি, থাইল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানি ও ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। 

সম্প্রতি আফতাব বহুমুখী ফার্মের গবেষণা কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এসব গবেষণায় অভূতপূর্ব সফলতা এসেছে। সফলতার ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটি কিছু মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব জাত অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের কৃষিতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

ধানের জাত উন্নয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড সহকারী ব্যবস্থাপক (বীজ) মো. ফজলুল হক বলেন, জলবায়ু সহিষ্ণু উচ্চফলনশীল পুষ্টিসমৃদ্ধ চিকন ধানের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্য নিয়ে ৮০ প্রজাতির ধানের জাত উন্নয়নে কাজ করছে আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেড। এছাড়া সুগন্ধি ধানের জাত উন্নয়নেও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। আগের থেকে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। মানুষ এখন আর মোটা ধানের ভাত খেতে চায় না। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা উচ্চফলনশীল মাঝারি চিকন থেকে চিকন জাতের উদ্ভাবনে কাজ করছি। আমাদের উদ্ভাবিত মাঝারি চিকন ধানের উৎপাদন অন্য সকল চিকন ধানের তুলনাই অনেক বেশি ফলন হবে। সেই সঙ্গে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হবে।

তিনি বলেন, চিকন ধানের চাহিদা থাকলেও ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা চিকন ধান চাষে আগ্রহী না। এজন্য আমাদের লক্ষ্য চিকন ধানের জাতগুলোর ফলন বাড়ানো। চিকন ধানগুলো হেক্টরপ্রতি ১০ টন বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণে উৎপাদন করাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আরেকটি লক্ষ্য লবণ, জলবায়ু ও খরা সহিষ্ণু বিভিন্ন ধানের জাত উদ্ভাবন করা। কেননা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, শীতকালে পড়ছে না শীত এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য আমরা খরা সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনের উদ্যোগ নিয়েছি। বৃষ্টি না হলেও যেন ধানের ফলন কমে না যায় এমন জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে কাজ করছি। অন্যদিকে সুগন্ধি জাতের ধান নিয়েও কাজ করছি। সুগন্ধি জাতের ধান সাধারণত হেক্টরপ্রতি ৩ টন উৎপাদন হয়। এজন্য এখন আর মানুষ এ জাতের ধান চাষ করতে চায় না। আমরা এই ধানের জাত নিয়ে আগে থেকেই কাজ করছি। ইতোমধ্যেই আমরা একটি সুগন্ধি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি যেটার উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৪.৯ টন। এটাকে আমরা আরও বেশি পরিমাণে উৎপাদনের জন্য কাজ করছি।

পেঁপের নতুন জাত উদ্ভাবনের বিষয়ে মো. ফজলুল হক জানান, শীত কিংবা গ্রীষ্ম সব সময়ই বাজারে পাওয়া যায় গুণে মানে সমৃদ্ধ ফল পেঁপে। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করে যথার্থ ফলন পাচ্ছে না কৃষক। হাইব্রিড পেঁপের ফলন বেশি হলেও তাতে মিষ্টির পরিমাণ কম। এছাড়া দ্রুত পচনশীল ফল হওয়ার কারণে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। ফলে চাষিদের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য পেঁপের জাত উন্নয়নে কাজ করছি। পেঁপের ফলন ও মিষ্টির তীব্রতা বৃদ্ধি এবং পচনশীলতা রোধ করতে ১৫৬টি পেঁপের জাত উন্নয়নে কাজ করছি।

মো. ফজলুল হক বলেন, পেঁপেকে আমাদের দেশে অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে যেসব পেঁপে চাষাবাদ হচ্ছে সেগুলোর ফলন আশানুরূপ হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হলো নারী ও পুরুষ বীজের সংমিশ্রণ না হওয়া। বীজের মধ্যে যদি কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পুরুষজাতীয় বীজ না থাকে তাহলে কোনো কৃষক পেঁপে চাষ করে লাভবান হবে না। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের পেঁপের বীজের মধ্যে নারী-পুরুষ বীজের সংমিশ্রণ সঠিক পরিমাণে থাকবে।

তিনি বলেন, বিদেশি জাতের পেঁপের ফলন বেশি হলেও দেশি পেঁপের মিষ্টির পরিমাণ খুবই কম। আমরা এটি নিয়েও কাজ করছি। আমাদের পেঁপের ফলন অনেক বেশি হবে একই সঙ্গে মিষ্টি হবে। আরেকটা বিষয় আমরা লক্ষ্য করেছি, পেঁপে খুব দ্রুত পচনশীল ফল। কাঁচা বা পাকা কোনো পেঁপেই খুব বেশিক্ষণ বাইরে রাখা যায় না। পেঁপেতে এমন একটি উপাদান ব্যবহার করব যার কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেনেটিক উন্নয়ন করবে ও পচনশীলতা রোধ করবে। ফলে দূর-দূরান্তে পেঁপে পরিবহন করা যাবে। আমাদের আরেকটি লক্ষ্য লবণ, জলবায়ু ও খরা সহিষ্ণু পেঁপের জাত উদ্ভাবন করা।

এসআর/ওএফ