মাছ চাষিদের জন্যে সবচেয়ে কঠিন সময় হলো শীত মৌসুম। এ সময়ে কুয়াশা, ঠাণ্ডা, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে বিভিন্ন রোগবালাই ও ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুখের পরিমাণ বেড়ে যায়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এ সময়ে মাছের যত্ন নেওয়ার জন্যে পরামর্শ দিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।

এ সময়ে মাছ চাষিদের কি কি সতর্কতা ও যত্ন নিতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন মৎস্য অধিদফতরের উপপরিচালক (ঢাকা বিভাগ) সৈয়দ মো. আলমগীর হোসাইন। শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আলাপকালে মাছ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন এ মৎস্য কর্মকর্তা।

সৈয়দ মো. আলমগীর হোসাইন জানান, শীতের সময়ে মাছে রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে দেখা দেয়। এ সময় মাছের খাওয়া দাওয়া অনেকটাই বন্ধ থাকে। বেঁচে থাকার জন্যে অল্প পরিমাণে খায়। ব্যাঙ যেমন শীতে লুকিয়ে থেকে বেঁচে থাকে, মাছও ঠাণ্ডা থেকে দূরে থাকতে চায়। এ সময়ে বিভিন্ন রোগবালাই ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।

পরিচর্যার বিষয়ে এ মৎস্য কর্মকর্তা জানান, শুরুতেই পরিচর্যার বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। এ সময়ে শতক প্রতি এক কেজি করে চুন পানিতে মিশিয়ে ঠাণ্ডা অবস্থায় সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুরে মাছের ঘনত্বকে খুবই গুরুত্ব দিতে হবে। কোনোভাবেই যেন মাছের পরিমাণ বেশি না হয়। স্বাভাবিক অনুপাত হলো প্রতি শতকে চার ইঞ্চি আকারের ৪০টা পোনা রাখা যাবে। আকারে বড় হলে সংখ্যা কমে আসবে।

শীতের সময়ে জাল দিয়ে ঘন ঘন মাছ ধরা যাবে না। খুবই জরুরি হলে জাল নামাতে হবে পুকুরে। খাবারে দেওয়ার সময়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। পরিমিত খাবার দেওয়ার বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। অপরিমিত খাবার দিলে একদিকে অপচয় হবে অপরদিকে ক্ষতিও। অতিরিক্ত খাবার দিলে পানির নিচে পচে গ্যাস তৈরি হবে। মাছের আয়তনের ওপর খাবার দিতে হবে। এক থেকে দুই ভাগ দিলেই হবে। দুইটা সময়ে খাবার দিতে হবে। সকাল ও বিকেলে খাবার দেওয়া উচিত।

এছাড়া মনে রাখতে হবে, পুকুরে পানি কমে দূষিত হয়ে যায় বলে শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। কার্প ও শিং জাতীয় মাছে ড্রপসি বা উদর ফোলা রোগ দেখা দেয়। মাছের ক্ষত রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ রোগের প্রতিকারে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা স্ট্রেপটোমাইসিন পরপর সাত দিন খাওয়াতে হবে। মাছ চাষ বিষয়ে যেকোনও পরামর্শের জন্য কাছের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

একে/ওএফ