ফাইল ছবি

আকাশ পরিবহন ব্যবসায় শীতকালকে পিক সিজন হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশেষ করে নভেম্বরের শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টার জন্য এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহরগুনে। 

সারা বছর বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো ব্যবসায়িক নানা প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। জেট ফুয়েলের উচ্চ মূল্য, অতিরিক্ত অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ, বছরান্তে অতিরিক্ত সারচার্জ, কাস্টমস ডিউটির অস্বাভাবিকতা সব কিছুকেই সঙ্গী করে বাংলাদেশ এভিয়েশনের পথচলা।

প্রতিনিয়ত বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি। জাতীয় বিমানসংস্থার সঙ্গে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধার বিস্তর ফারাক। আন্তর্জাতিক কিংবা অভ্যন্তরীণ রুটের প্রতিযোগিতামূলক আকাশ পরিবহন ব্যবসায় জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নানামুখী সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে অনেক বেশি অগ্রগামী।

আরও পড়ুন >> কুয়াশায় শিডিউল লণ্ডভণ্ড, ঢাকার ফ্লাইট গেল কলকাতা-হায়দ্রাবাদ

ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির মধ্যে নানা অসঙ্গতি থাকার পরও বাংলাদেশে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশের আকাশপথকে সচল রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই অসঙ্গতির বেড়াজালে পড়ে ৮/৯টি বেসরকারি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। 

ঘন কুয়াশায় এয়ারলাইন্সগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার গল্প নিয়েই লেখা শুরু করেছিলাম। আজ বাংলাদেশ এভিয়েশন প্রায় ৫১ বছর অতিক্রম করছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের মতো ব্যয়বহুল প্রকল্প আজ স্বপ্ন নয় বাস্তবতার মুখোমুখি। আগামী এক বছরের মধ্যে আলোর মুখ দেখার প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। 

অগ্রসরমান বাংলাদেশ পদ্মা সেতু, মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবে রূপ দিয়ে চলেছে। কিন্তু ঘন কুয়াশায় ভিজিবিলিটি সমস্যা থেকে এয়ারলাইন্সগুলোকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) এর মতো আধুনিক কারিগরি যন্ত্রপাতি এখনো আমাদের বিমানবন্দরগুলোতে স্থাপন করতে পারিনি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আইএলএস এর অভাবে প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে এয়ারলাইন্সগুলো আতংকে দিন অতিক্রম করে থাকে। ঘন কুয়াশার ছোবলে আন্তর্জাতিক কিংবা অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটগুলোর শিডিউল চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়। ডাইভার্ট কিংবা দিক পরিবর্তন করে কলকাতা কিংবা মিয়ানমারে দেশীয় কিংবা বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো জরুরি ভিত্তিতে অবতরণ করতে বাধ্য হয়। এতে করে এয়ারলাইন্সগুলোর পরিচালন ব্যয় কয়েকগুন বেড়ে যায়। এয়ারক্রাফটগুলোর অতিরিক্ত ইঞ্জিন সাইকেল ও আওয়ার শেষ হয়। অতিরিক্ত অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বহন করতে হয়, সঙ্গে অতিরিক্ত জেট ফুয়েলের অপচয়।

ভিজিবিলিটি ৬০০ থেকে ৮০০ মিটার পর্যন্ত থাকলেও অনেক দেশের বিমানবন্দরে এয়ারক্রাফটগুলো অবতরণ করতে পারে কিন্তু বাংলাদেশে ভিজিবিলিটি ১৬০০ মিটার থাকলেও অবতরণের সুযোগ পায় না। এটা শুধু দেশীয় এয়ারলাইন্স নয় বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর এয়ারক্রাফটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। 

উন্নত আইএলএস সুবিধা না থাকায় বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোও তাদের ফ্লাইট শিডিউল বজায় রাখতে পারে না। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্যাটাগরি-১ এ অবস্থান করছে। উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের আদলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক তিনটি বিমানবন্দরের আইএলএস সিস্টেমকে জরুরি ভিত্তিতে ক্যাটাগরি উন্নয়নের মাধ্যমে ভিজিবিলিটি সমস্যা থেকে এয়ারলাইন্সগুলোকে রক্ষা করলে এয়ারলাইন্স এবং যাত্রীরা ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে। ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোকে উন্নত আইএলএস এর আওতায় আনার জন্য রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের কাছে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর প্রত্যাশা। 
  
সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সবসময় ঘন কুয়াশার কারণে এয়ারলাইন্সগুলোকে ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। নতুন বছরের প্রারম্ভে ঘন কুয়াশার হাত থেকে এয়ারলাইন্সগুলো ও যাত্রীদের নানা বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ উন্নত আইএলএস স্থাপন করবে এই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সবার।        
 
লেখক: মো. কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স