বিমানবাহিনী নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, এপিবিএন অধিনায়কের অপসারণ চেয়ে চিঠি
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালনরত ১৩ এপিবিএন-এর অধিনায়ক পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সিহাব কায়সার খান বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিয়ে অশোভন ও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে তার অপসারণ চেয়ে পুলিশের আইজিকে চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শককে চিঠি পাঠান বেবিচকের সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমডোর মো. আসিফ ইকবাল। জবাবে পুলিশের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বেবিচকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে এপিবিএনকে বিমানবন্দরের ভেতর থেকে সরিয়ে বিমানবন্দরের বাইরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
আইজিপিকে পাঠানো বেবিচকের চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ২৪ আগস্ট বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কনফারেন্স রুম-১ এ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান, বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিকসহ মন্ত্রণালয়, বেবিচক, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বাংলাদেশ কাস্টমস, ১৩ এপিবিএন, এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সিহাব কায়সার খান বলেন, ‘‘হঠাৎ করে যখন বাংলাদেশে কর্মবিরতির একটি ব্যাপার ছিল পুলিশের, তখন ওই জায়গাটায় ওই ভ্যাকিউম-এর সময় কিউআরএফ ফ্রম এয়ার ফোর্স ডিপ্লয়মেন্ট হয়। আপনারা (বাংলাদেশ বিমানবাহিনী) যদি 'ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার' এ আসেন.. তাহলে বর্তমানে সেনাবাহিনী যেভাবে কাজ করছে জেলায়, মেট্রোতে.. তারা সবাই কিন্তু এইড করছে, কাকে? সিভিল পাওয়ারকে। মানে পুলিশকে এইড করছে। আপনারা (বিমান বাহিনী) তো আমাকে (এপিবিএন) এইড করছেন না, আপনারা তো আমাকে রিপ্লেস করে ফেললেন, আমি তো আমার জায়গাতে নাই।’’ (উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে এপিবিএনকে বিমানবন্দরের ভেতর থেকে সরিয়ে বিমানবন্দরের বাইরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়)
মাননীয় উপদেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ ধরনের বক্তব্য ছিল অত্যন্ত অশোভন ও শিষ্টাচারবহির্ভূত। রাষ্ট্রীয় সামরিক বাহিনীকে নিয়ে আনুষ্ঠানিক ফোরামে এ ধরনের মন্তব্য তার অপেশাদারিত্ব ও ধৃষ্টতার বহিঃপ্রকাশ। এই বক্তব্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, অধঃস্তন সদস্যদের মনোবল ভঙ্গ করে এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একটি পেশাদার, সুশৃঙ্খল ও নিবেদিত বাহিনী। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের প্রায় সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে অপারেশন সচল রেখেছে। তাদের সম্পর্কে কটূক্তি বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে এবং মনোবল নষ্ট করেছে।
উন্নত এভিয়েশন নিরাপত্তা ও সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করতে ১৩ এপিবিএনের অধিনায়ক পদে একজন উপযুক্ত কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হোক।’
আপত্তিকর বক্তব্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়
২৪ আগস্টের আলোচিত ওই সভায় উপস্থিত থাকা বেবিচকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এপিবিএন অধিনায়কের এই বক্তব্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সবার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তাই আইজিপির কাছে তাকে সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
মাননীয় উপদেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ ধরনের বক্তব্য ছিল অত্যন্ত অশোভন ও শিষ্টাচারবহির্ভূত। রাষ্ট্রীয় সামরিক বাহিনীকে নিয়ে আনুষ্ঠানিক ফোরামে এ ধরনের মন্তব্য তার অপেশাদারিত্ব ও ধৃষ্টতার বহিঃপ্রকাশ।
তিনি জানান, পুলিশ থেকে জানানো হয়েছে, এভাবে একটি সংস্থার চিঠির ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। পুলিশের পক্ষ থেকে বেবিচককে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশকে চিঠি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া এন্ড পিআর) এ এইচ এম শাহদাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, চিঠিটি পুলিশ সদরদপ্তরে রিসিভ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগে পৌঁছেছে।
এআর/এমজে/জেএস