অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেতন ভাতা সমন্বয় এবং বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটরা। আর এই সংবাদে বিমানের টিকিট ফেরত দেওয়ার হিড়িক পড়েছে। 

আন্দোলনে সৌদি আরবের দাম্মাম, কাতারের দোহা, আবুধাবি ও দুবাই রুটে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সেই সব রুটের টিকিটগুলো বেশি ফেরত দিচ্ছেন যাত্রীরা।

আজ শনিবার (১৭ জুলাই) বিমানের নতুন এমডি আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমানে পাইলটদের আন্দোলনের সংবাদে গত ৪৮ ঘণ্টায় মোট ৭ কোটি টাকার টিকিট ক্যান্সেল (ফেরত) হয়েছে। পাইলটদের আল্টিমেটামের সংবাদে আমরা যাত্রীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছি। পাইলটরা এখনও আন্দোলনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি। এছাড়াও কোন কোন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে না এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমানকে কোনো আল্টিমেটাম দেওয়া হয়নি। তারা শুধুমাত্র আমাদের বেতন সমন্বয়ের বিষয়গুলো অবগত করেছেন।

এর আগে বুধবার (১৪ জুলাই) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, নির্বাহী কমিটিতে বিমানের বেতন সমন্বয়ের বিষয়টি উঠে এসেছে। নির্বাহী কমিটিতে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, শিগগিরই বেতন সমন্বয়ে বৈষম্যের বিষয়ে বিমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানানো হবে। এছাড়াও বিমানের কাছে আগামী ৩০ জুলাই, ২০২১ এর মধ্যে বিমানের অন্যান্য কর্মকর্তা/কর্মচারীর মতো পাইলটদের বেতন সমন্বয়ের জন্য অনুরোধ করা হবে। ইতোমধ্যে বাপার পক্ষ থেকে পাইলটরা ৩০ জুলাই পর্যন্ত বিমান ও বাপার মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিপত্রের বাইরেও ফ্লাইট পরিচালনার ছাড় প্রদান করেছেন। তবে ৩০ শে জুলাই এর মধ্যে বেতন সমন্বয় না করলে এই তারিখের পর থেকে পাইলটরা শুধুমাত্র বিমান-বাপার মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিপত্র অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা করবেন। তবে করোনা মহামারি চলাকালীন সময়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জামাদি, ওষুধপত্র, ভ্যাকসিন পরিবহনের জন্য যেকোনো ফ্লাইটের জন্য পাইলটরা সদা প্রস্তুত থাকবেন।

এর আগে ২০২০ সালের মে মাস থেকে বিমানের পাইলটদের বেতন ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদের একটি অফিস আদেশে বিমানের সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। তবে পাইলটদের কর্তনের বিষয়টি বহাল থাকে। এর পর থেকেই ক্ষুব্ধ হন তারা।

ওই আদেশে বলা হয়েছে, বিমানে কর্মরত ‘কর্মকর্তা’ এবং যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছর, জুলাই মাসে তাদের কোনো বেতন কর্তন করা হবে না। তবে আদেশে ককপিট ক্রুদের বিষয়ে বলা হয়েছে, যেসব ককপিট ক্রুর (পাইলট অন্তর্ভুক্ত) চাকরির বয়স ৫ থেকে ১০ বছর জুলাই মাসে তাদের বেতন থেকে ৫ শতাংশ এবং যাদের চাকরিকাল ১০ বছর বা এর ঊর্ধ্বে তাদের ২৫ শতাংশ বেতন কাটা হবে।
 
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) বাপার সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো ফ্রন্টলাইনারের বেতন কর্তন হয়েছে বলে আমার জানা নেই। প্রথমে কর্তন করা যেমন একটি অন্যায় হয়েছে, বর্তমানে পাইলট বাদে অন্যদের বেতন সমন্বয়ে আরেকটি অন্যায় করা হলো। অন্যান্য খাতে ফ্রন্টলাইনারদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, আর বিমানে প্রণোদনাতো দূরের কথা, বিমান আমাদের কোয়ারেন্টাইনের জায়গাটিও দেয়নি। এখন বেতন কর্তনের বৈষম্যও করল তারা। এ বিষয়টা কি পাইলটরা ভালোভাবে নিতে পারছেন? এমন যন্ত্রণা দিয়ে, অনেকটা চাপের মধ্যে পাইলটকে ফ্লাইট পরিচালনা করানো হচ্ছে। আমাদের চাকরিটা গ্রাউন্ড জব না। আপনারা (বিমান) একজন পাইলটের হাতে আড়াই থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার প্লেন চালনার জন্য তুলে দিচ্ছেন অথচ বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্য করছেন। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।

এআর/এসকেডি/এইচকে